বাংলাদেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মানুষের জীবনযাত্রা পরিবর্তন হওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এক আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের জীবনযাত্রা পরিবর্তন হওয়ার কারণে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়ছে। দেশে বর্তমানে ২০ লাখের মতো ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এক লাখ মানুষ প্রতি বছর এই রোগে মারা যাচ্ছে। তাই আমাদের ক্যান্সার কেন হয় এটা জানতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে যাতে ক্যান্সার শনাক্ত হয় সে জন্য ক্যান্সার সেবার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, শুধু ঢাকার মানুষ ক্যান্সার চিকিৎসক পাবে এমন না। গ্রামের মানুষের ক্যান্সার চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য আট বিভাগে আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাজের অনুমোদন দিয়েছেন।
জাহিদ মালেক বলেন, হাসপাতালগুলোর উপর চাপ কমাতে স্বাস্থ্যসেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটা হলে মানুষের চিকিৎসা নিতে ঢাকায় আসার প্রয়োজন হবে না। চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমে আসবে। এর মাধ্যমে ঢাকার হাসপাতালগুলো চাপ কমে আসবে।
করোনাভাইরাসের টিকার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে ১০ কোটি টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। আমাদের টার্গেট জনগণ ১২ কোটির মধ্যে ৭৫ শতাংশ টিকার আওতায় চলে আসছে। বাকি লোকদের মধ্যে ভাসমান জনগোষ্ঠী, পরিবহন শ্রমিকদের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
জাহিদ মালেক বলেন, অনেকের সাথে আমি কথা বলেছি। তারা ইচ্ছা করেই টিকা নিচ্ছেন না, তবে আমি বলতে চাই আমাদের দেশের মানুষের টিকা নেয়ার প্রবণতা রয়েছে। দেশের জনগণ অন্যান্য দেশের মতো না।
‘ইউরোপে দেখলাম টিকা নেয়ার জন্য আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে; রাস্তা-ঘাটে মারপিট করা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডস, আমেরিকাতেও এমন পরিস্থিতির দেখা গেছে, তবে বাংলাদেশে এখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি,’ বলেন মন্ত্রী।
টিকা মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দিচ্ছে মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যু কম হওয়ার কারণ হলো আমাদের একটি বড় জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। এ কারণে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও কম।
তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তবে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গোটা দেশ মিলিয়ে এক থেকে দেড় হাজার করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি। দেশের ৭৫ শতাংশ বেড এখনো খালি রয়েছে। তাই সবাইকে অনুরোধ করব, যারা এখনো টিকা নেননি তারা টিকা নিয়ে নিন।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খোরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীর উপস্থিত ছিলেন।