মাত্র একদিনের বৃষ্টিতেই নাকাল দুর্গাপুর। কাঁদার কারণে সড়ক দিয়ে চলাই দায়।
গত শুক্রবার দিন ব্যাপী কখনো বা গুঁড়িগুঁড়ি কখনো বা মাঝারি বৃষ্টিতে সড়কের এই অবস্থা। রয়েছে জলাবদ্ধতা আর কাদার স্তুপ। নেত্রকোণার দ্বিতীয় শ্রেণীর পৌরসভা দুর্গাপুরের প্রধান সড়কেই ডুবে আছে কাঁদায়।
পৌর শহরের তেরি বাজার, কালীবাড়ি, উকিলপাড়া, প্রেসক্লাব মোড়, উপজেলা মোড়, হাসপাতাল রোড, কলেজ রোড, সাধুপাড়া, মধ্য বাজার, পান মহল, মেছুয়া বাজার, এমপির মোড়, মোক্তারপাড়া, কাছারি মোড়, দক্ষিণপাড়া, বিরিশিরি, উৎরাইল সহ শহরের প্রতিটি সড়কে চিত্রই যেন একই রকম।
তার উপর সড়কগুলোর দিয়ে অবাধে ভেজা বালু পরিবহনে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে পায়ে হেঁটে চলাচল করাও দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে সুসং দুর্গাপুরের আসলেও অনেকেই ফিরে গেছেন রাস্তার এই বেহাল চিত্র দেখে। কেউ কেউ কাঁদাময় সড়ক হেঁটে কোনরকম সোমেশ্বরী নদী পার হলেও দুর্ভোগের মাত্রায় ছিল সবচেয়ে বেশি।
পর্যটকরা বলছেন প্রকৃতির অপার সৃষ্টি এই এলাকায় কোনোভাবেই এমন সড়ক কাম্য করা যায় না। সুসং দুর্গাপুরকে পর্যটক বান্ধব শহর তৈরি করতে হলে আগে সোমেশ্বরীতে চিরদিনের মত বালু উত্তোলন ও বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে শহরের সড়কগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। তা না হলে এই এলাকায় পর্যটকরা এসে দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই নিতে পারবে না।
প্রেসক্লাব মোড় থেকে কালিবাড়ি মোড় হয়ে পান মহল পর্যন্ত সড়কে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ফলে সড়কের এক পাশে কোনরকমে চলাচল করছে পথচারীরা। তারপর আচমকা বৃষ্টিতে সবকিছুই যেন করেছে এলোমেলো।
এই সড়কগুলোর সামরিক দুর্ভোগ কোন ভাবে মেনে নিলেও বাকি সড়কগুলোর নাজুক অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না পৌরবাসী। শহরের বেশকিছু সড়কে কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও আসছে না কোনো কাজে। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে রীতিমতো সমালোচনার ঝড়। অনেকেই আবার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ছবি পোস্ট করে “দ্যা নিউ ওয়াশিংটন সিটি” লিখে কটাক্ষ করছেন।
পৌর শহরের এই দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। শহরের ভিতরে অবাধে ভেজা বালু পরিবহনের ফলে সারাবছরই কাঁদায় ভাসে প্রতিটি সড়ক। এই নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়রা আন্দোলন করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমেশ্বরীর পাড় ঘেঁষে বাইপাস সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি আজ অব্দি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন থেকে বারবার আশ্বাস দিয়েও কেনো সোমেশ্বরী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত ভেজা বালু পরিবহন বন্ধ হচ্ছে না? এই বালুর কারণে যত দুর্ভোগ পৌর শহরের। দ্বিতীয় শ্রেণীর পৌরসভা হয়েও আমরা এখনো কাক্সিক্ষত সেবা টুকুও পাচ্ছিনা। শহরের একটি সড়ক দিয়েও মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে।
দুর্গাপুর বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, এই কাঁদার কারণে আমরা প্রতিবার লস এর মধ্যে থাকি। শহরের একটি সড়ক দেখাতে পারবেন না যেখানে কোন কাঁদা নাই। ছোট-বড় সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সব সড়কেই কাঁদার কারণে মানুষ চলতে পারে না। কিভাবে তারা আমাদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান আসবে। তারপর সড়কের এই কাঁদা ছিটে নষ্ট হচ্ছে দোকানের দামি দামি মালপত্র। আসলে আমরা এই নরক থেকে কবে মুক্তি পাব স্বয়ং আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি অজয় সাহা জানান, পৌর শহরের এই চিত্র দীর্ঘদিনের। এই দুর্ভোগের সাথে লড়াই করতে করতে এখন পৌরবাসী ক্লান্ত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস আশ্বাস আর আশ্বাস দিলেও লাভ হয়নি কিছুই। আজ অবধি আমরা এই সুসং জনপদের বছরে পর বছর ফেলেও দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান পাইনি। মাত্র ১ দিনে বৃষ্টিতেই শহরের যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা কল্পনাও করা যায় না। আজ গ্রাম থেকে বিয়ের বাজারের জন্য একজন নারী একজন পুরুষ বাজারে আসছিলো কিছু পথ আসতেই তারা ধুর বাজার করব না বলে বাড়ি ফিরে গেছে। এরকম উদাহরণ অহরহ। তারপরও প্রশাসন কিংবা পৌর প্রশাসন নজরে এইগুলা আসেনা। তারা শুধু চিনে বালু!
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র আলাউদ্দিন আলাল জানান, অনাকাক্সিক্ষত বৃষ্টিতেই সড়কের এই অবস্থা। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সড়কের কাঁদা অপসারণের। ইতিমধ্যে হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে লেবার নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই এই কাঁদা প্রসারণ হয়ে যাবে।