গবাদী পশুর ব্যাকটেরিয়াজনিত জুনোটিক রোগের ঝুঁকি হ্রাসে গবেষণা

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে গবাদি পশুর জুনোটিক রোগ, টিউবারকুলোসিস (টিবি) এবং ক্যামপাইলোব্যাকটেরিওসিসের ঝুঁকি কমাতে একটি গবেষণা কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১২ টার দিকে ‘বাংলাদেশের নির্বাচিত ডেয়রি ফার্মে জুনোটিক যক্ষা ও ক্যামপাইলোব্যাকটেরিওসিস রোগের গবেষণা’ শীর্ষক ওই কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের কোঅর্ডিনেটর , গবেষক এবং বাকৃবি মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এস. এম. লুৎফুল কবির। গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে ছিলেন আইসিডিডিআরবির ড. মো. জিয়াউর রহিম এবং কো-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ছিলেন বাকৃবি ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল হাসান শিকদার।

অধ্যাপক ড. এস. এম. লুৎফুল কবির জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা এবং ময়মনসিংহের মোট ৩০০ টি ফার্মে বিভিন্ন গবেষণা করা হয়। এসব অঞ্চলে ডেইরি ফার্মিংয়ে জুনোটিক যক্ষা ও ক্যামপাইলোব্যাকটেরিওসিস রোগের সম্ভাব্য ঝুকি চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া এ রোগ সমুহের জুনোটিক ইমপ্যাক্ট এবং ইকোনোমিক ইমপ্যাক্ট নির্ণয় করা হয়েছে। প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত ফলাফল উক্ত জুনোটিক রোগ সমূহের নিয়ন্ত্রণে ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে যক্ষা ও ক্যামপাইলোব্যাকটার জীবাণুর বিরুদ্ধে টিকা তৈরীর পরিকল্পনা করা দরকার।
তিনি আরও জানান, ক্যাম্পাইলোব্যাকটেরিওসিস ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এরা গবাদি পশুর ক্ষেত্রে ডাইরিয়া ও গর্ভপাত সৃাষ্ট করে। এই রোগটি আক্রান্ত গাভীর দুধ ও আক্রান্ত গাভীর মলের মাধ্যমে সুস্থ পশুতে সংক্রমিত হয়। অপরদিকে টিবিও গবাদিপশুর ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি রোগ। রোগটির কারণে গবাদিপশুর উৎপাদন ক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায় এবং খামারীদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। এমনকি এই রোগটি গবাদিপশু হতে মানুষে সংক্রমিত হয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ) আইসিডিডিআরবি ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে কেজিএফ ।

আইসিডিডিআরবির প্রধান ইনভেস্টিগেটর ড. মো. জিয়াউর রহিমের সভাপতিত্বে এবং বাকৃবি ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল হাসান শিকদারের সঞ্চালনায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএলএসের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা । বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হোসেন, কেজিএফের পরিচালক ড. নাথু রাম সরকার । এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকবৃন্দ এবং বিভিন্ন অঞ্চলের প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ও খামারিরা উপস্থিত ছিলেন।

নাথুরাম সরকার বলেন, খামারীরা সরাসরি উপকৃত হবেন সেই পরামর্শগুলো এ কর্মশালার মাধ্যমে গ্রহণ করতে ছড়িয়ে দিতে পারি। প্রাণিসম্পদ সেক্টর এই ধরণের গবেষণার মাধ্যমে আরো এগিয়ে যাবে।

ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, নিরাপদ খাদ্য দিবসের এই দিনে এই কর্মশালাটি খুবই গুরুত্ববহ। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এখন দরকার খাদ্য নিরাপত্তা। আর সে জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। খামারীদের রোগবালাই প্রতিরোধে আমাদের গবেষকরা কাজ করছেন। ভালো ভালো গবেষণা হচ্ছে। কুরবানির সময় এখন আর পশুর অভাব হয় না। বাহির থেকে পশু আমদানী করতে হয় না। এটিই প্রমাণ করে দেশে মাংস, দুধ, ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। বর্তমানে আমরা রপ্তানীর দিকে যেতে হবে এবং সেটি হচ্ছেও। এর পরিমাণ বাড়াতে আমরা কাজ করছি। ২০২৬ সালের পশুর রোগগুলো চিরতরে নির্মূল করার জন্য কাজ করছি।

সারাবিশ্বে যখন অর্থনীতেতে বিপর্যস্ত সেখানে বাংলাদেশ দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গ্রামীণ কৃষি এগিয়ে চলছে। ঘরে ঘরে সবাই পশু পালন করছে। সেজন্য তাদের জন্য পশু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর, আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

Share this post

scroll to top