শিক্ষা জীবনের শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ সময় কেটে যায় ক্লাস, পরীক্ষা আর বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে। তাই বাইরের জগতের অনেক বিষয়ই সেভাবে জানা হয়ে উঠে না। তবে স্কুল কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবতাকে জানা, বোঝা, কখনও শুধুই মনের খোরাক মেটাতে ঘোরাঘুরিতে থাকে বিশেষ আগ্রহ। কখনও বন্ধুরা দলবেঁধে, কখনও দলছুট হয়ে আবার কখনও একান্তই পড়াশোনার অংশ হিসেবে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকে।
সম্প্রতি আমরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত একদল শিক্ষার্থী মিলে ঘুরে এলাম দেশের সাতটি জেলা। মূলত গবেষণার উদ্দেশ্যে গিয়েও প্রকৃতি, পরিবেশ ও এর আশেপাশের মানুষের সাথে মেশা, আনন্দ প্রমোদ সবই ছিলো এই সফরে। আমাদের এ গবেষণা সফরে সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম। স্যারের নেতৃত্বে এ গবেষণা দলে আমরা ছিলাম মোট ৯ জন। এ দলের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন রুমা গাইন, সানজিদা মার্জিয়া, কানিজ ফাতেমা উষা, ইশরাত জাহান, কামরুন নাহার, তৌফিকুর রহমান, সাদিয়া আফরিন অনি।
আমাদের সফরটি মূলত ছিল একটি গবেষণার। উদ্দেশ্য ছিল আমাদের পরিবেশ, মাটি, পানি, বায়ু ও কৃষির বর্তমান অবস্থা জানার। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য, উপাত্ত, নমুনা সংগ্রহ করে এনে বিশ্বিবিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। আমাদের এ গবেষণা যাত্রা শুরু হয় বাকৃবি ক্যাম্পাস, ময়মনসিংহ থেকে। সূর্যমামা উঠার আগেই আমরা মাইক্রোবাসে চড়ে যাত্রা করি। টাঙাইলে গিয়ে আমাদের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথমে আমাদের সুপারভাইজার স্যার আমাদের ৩ টি গ্রুপে আমাদের ভাগ করে দিলেন। আর তথ্য সংগ্রহের জন্য নিদিষ্ট একটি ফরম দিলেন। প্রথমে আমরা নামলাম বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু সংলগ্ন যমুনা নদীর চরে। এরপর শুরু হলো সেসব কৃষিজীবী থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে কৃষি কাজের বিভিন্ন তথ্য ও নমুনা সংগ্রহের কাজ। তাদের কৃষি কাজে বতমান সমস্যা জানা, সার ব্যবহারের পরিমাণ জানা, সার ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব জানা, রোগবালায়ের আক্রমণ সর্ম্পকে জানা, পরিবেশ সচেতনার বিষয়সহ সেখান পানির কি অবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য জানা ও নমুনা সংগ্রহ। চরের ভিতর এসব কাজ চলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত। এরপর আমরা চলে যাই নাটোর জেলায়। নাটোরে গিয়ে আমরা দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি যা বর্তমানে উত্তরা গণভবন নামে পরিচত এই ঐতিহাসিক নির্দশনটি ঘুরে দেখি। কিছুটা জিরিয়ে নিয়েই ফের আমাদের তথ্য সংগ্রহ চলতে থাকে নাটোরের বিভিন্ন জায়গায়। এসব করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। এরপর আমরা চললাম রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। রাজশাহীতে রাত্রিযাপন শেষে আমরা ভোরবেলা রওনা দিলাম সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে। কুষ্টিয়াতেই গবেষণার ওই একই কাজ চলতে থাকলো। এভাবে চারদিনে আমরা ঝিনাইদহ, খুলনা, বাগেরহাট ও যশোর শহরে চলতে থাকে আমাদের গবেষণার কার্যক্রম। তবে এত কিছুর পরও যেখানেই গিয়েছি সে জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখাতে একটুকু কার্পণ্য করেননি আমাদের সুপারভাইজার স্যার। গবেষণার ব্যস্ততম কাজ, আড্ডার ফাঁকে চারটি দিন কীভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। এবার আমাদের কাজ প্রাপ্ত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ ও নমুনাগুলো গবেষণাগারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা। এরপর এই গবেষণার তথ্যগুলো দেশ ও জাতির সামনে পরামর্শ আকারে উপস্থাপন করা। আর এই গবেষণার পরামর্শ গুলো আমাদের কৃষক ভাইরা গ্রহণ করার মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষি আরো এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।