গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার কুনিয়া তারগাছ এলাকায় শনিবার নাসা গ্রুপের লিজ অ্যাপারেলস নামের পোশাক কারখানা লে-অফ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পোশাকশ্রমিকদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে ৫ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের আশপাশের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
পুলিশ বিক্ষোভ থামাতে ব্যাপক শর্ট গানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা আশপাশের অন্যান্য পোষাক কারখানা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে।
জানা গেছে, শ্রমিকরা শনিবার সকালে যথারীতি কাজে যোগদান করতে এসে কারখানার গেটে ৬২ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্তসহ লে-অফ ঘোষণার নোটিশ দেখতে পান। এ সময় কারখানার চারপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। পাওনা পরিশোধ ও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধের এই ঘোষণায় শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। উত্তেজিত ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে।
পুলিশ অবরোধ ভাঙতে শ্রমিকদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের মুখে শ্রমিকরা টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ও মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে বিভিন্ন শাখা রোডে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শ্রমিকরা পাশের এলাকায় গিয়েও ভাংচুর চালায়। এতে আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকার হুপলোম, তারগাছ এলাকার মুনলাইট ও অনন্ত গার্মেন্ট কারখানায়ও ভাংচুর চালায়।
লিজ অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিক সালাহউদ্দিন জানান, গত ২৬ জানুয়ারি কারখানার চার তলায় আয়রন সেকশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনের সূত্রপাত হওয়ামাত্রই কারখানার সাইরেন বেজে উঠলে শ্রমিকরা দৌড়ে নিচে নেমে আসেন। এ সময় তারা দেখতে পান চারতলায় শ্রমিকরা আটকা পড়েছেন। তৎক্ষণাত তারা সেখানে দৌড়ে গিয়ে চার তলার শ্রমিকদেরকে নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনেন।
কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া চারতলা থেকে শ্রমিকদের নামিয়ে আনার কারণে কর্তৃপক্ষের লোকজন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সাথে চরম দুর্ববহার করেন। এ ঘটনায় শ্রমিকরা প্রতিবাদ করার কারণে সম্পূর্ণ অযৌক্তিভাবে ৬২ জন শ্রমিককে বরখাস্তসহ কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে।
ওই কারখানার অপর একজন শ্রমিক বিল্লাল হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষ অহেতুক অজুহাতে পরিকল্পিতভাবে আগে থেকেই কারখানায় পুলিশের উপস্থিতি ঘটিয়ে লে-অফ ঘোষণা করেছে এবং বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আমাদের অন্তত ২৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
তিন দিন আগের যে ঘটনার অজুহাতে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দাবি করে তিনি বলেন, এর আগে এর চেয়ে বড় ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ কখনো কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেনি। এবার হয়তো কারখানা পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের অন্য কোনো ব্যর্থতার দায় শ্রমিকদের ওপর চাপানোর চেষ্টা চলছে।
এদিকে কারখানা লে-অফ ঘোষণা ও ৬২ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্তের কারণ হিসেবে লিজ কমপ্লেক্সের পরিচালক গাজী মোহাম্মদ জাবের জানান, গত ২৬ জানুয়ারি শ্রমিকরা কোনো কারণ ছাড়াই উৎপাদন বন্ধ রাখে।
শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ায় ওই দিন কারখানার নির্বাহী পরিচালক মোশারফ হোসেন ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা নান্নু মিয়াকে শ্রমিকরা মারধর করে এবং উশৃংখল শ্রমিকরা কারখানার অফিস কক্ষসহ প্রতিটি ফ্লোরে ভাংচুর চালায়। ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, সকল সিসি ক্যামেরা, কম্পিউটার, এনডিআর, ও সার্ভার ও অন্যান্য মূল্যবান ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ভাংচুর করে। এ সময় শ্রমিকরা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ১২টি মোবাইল ফোন ও নগদ ১৫ লাখ টাকা অফিস থেকে লুটে নেয়।
এ ঘটনায় জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ২০০৬ সনের শ্রম আইনে ২৯ জানুয়ারি থেকে কারখানা বন্ধ ও অভিযুক্ত ৬২ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্তসহ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাছা থানার ওসি মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, সংঘর্ষে আমাদের ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫৭ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৩ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কারখানাসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।