পাকিস্তানের নতুন প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারক উমর আতা বান্দিয়াল। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি তাকে দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। ২ বছর ৪২ দিন দায়িত্ব পালন শেষে আগামী ১লা ফেব্রুয়ারি অবসরে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ। এরপর ২রা ফেব্রুয়ারি নতুন বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব শুরু করবেন বিচারক বান্দিয়াল। ২০১৯ সালের ২১ শে ডিসেম্বর তাকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হয়েছিল। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৭ই জানুয়ারি এক নোটিফিকেশনে বলেছে, পাকিস্তানের সংবিধানের অধীনে সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারক উমর আতা বান্দিয়ালকে প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতাবলে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ কার্যকর হবে ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে। কিন্তু ডন লিখেছে, জ্যেষ্ঠতার হিসাবে ২০২৪ সালের ২৫শে অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হওয়ার কথা ছিল বিচারক ইসা’র।
এরপর ২০২৫ সালের ৪ঠা অক্টোবর এই পদ পাওয়ার কথা বিচারপতি সৈয়দ মানসুর আলি শাহ-এর।
তার এ পদে থাকার কথা ২০২৭ সালের ২৭ শে নভেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা বিচারপতি মুনিব আখতারের। তারপরে ২০২৮ সালের ১৪ই ডিসেম্বর থেকে প্রধান বিচারপতি হওয়ার কথা ইয়াহিয়া আফ্রিদির। তার এ পদে থাকার কথা ২০৩০ সালের ২২ শে জানুয়ারি পর্যন্ত।
বান্দিয়াল যখন তার দায়িত্ব শুরু করবেন, তখন তার সামনে ৫১ হাজার ৭৬৬টি মামলার বোঝা থাকবে। শুধু সুপ্রিম কোর্টে এসব মামলা মুলতবি অবস্থায় আছে। সর্বোচ্চ আদালত, জেলা আদালতসহ পাকিস্তানের বিচার বিভাগে এমন মামলার সংখ্যা কমপক্ষে ২১ লাখ।
বিচারপতি বান্দিয়ালের জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর লাহোরে। তিনি কোহাট, রাওয়ালাপিণ্ডি, পেশোয়ার এবং লাহোরে বিভিন্ন স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর কেমব্রিজ থেকে ল’ ত্রিপোস ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনের অভিজাত লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টার অ্যাট ল’ সম্পন্ন করেছেন। ১৯৮৩ সালে লাহোর হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করেন। এর দু’চার বছরের মধ্যে তিনি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
লাহোরে আইনি চর্চা করার সময় বিচারপতি বান্দিয়াল প্রধানত বাণিজ্যিক, ব্যাংকিং, ট্যাক্স এবং সম্পদ বিষয়ক মামলা দেখাশোনা করেছেন। ১৯৯৩ সালের পর তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বিরোধ মোকাবিলায় দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর তিনি লাহোর হাইকোর্টের একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৭ সালের নভেম্বরে সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফের সময়ে প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অর্ডারে অধীনে নতুন করে বিচারক হিসেবে শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানান।
ওদিকে বিচারপতি বান্দিয়ালকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করায় স্বাগত জানানো হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আহসান ভুন অনলাইন ডনকে বলেছেন, তিনি আশা করেন বিচারক বান্দিয়াল সততা প্রদর্শন করবেন। তিনি এমন একজন বিচারক হবেন, যিনি আইনি সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন, পাকিস্তানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সব রকম অনাচারের বিরুদ্ধে সমুন্নত থাকবেন। আহসান ভুন বলেন, নতুন প্রধান বিচারপতি কোমলভাষী। তার সময়ে বেঞ্চ এবং বার-এর মধ্যে সম্পর্ক হবে আন্তরিক। এই সম্পর্ককে আরো সুখকর করতে বড় ভূমিকা নেবেন নতুন প্রধান বিচারপতি।
সিন্ধু হাইকোর্টে বার এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচারপতি বান্দিয়াল নিজের সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন। তিনি নিজেকে একজন প্রাজ্ঞ এবং সুষ্ঠু মানসিকতার বিচারক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি তার বিচারের রায় নিজের মান বজায় রেখে দেবেন। তাকে প্রধান বিচারপতি করার খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে বলেছেন, তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর বাড়তি চাপে থাকবেন। এ সময়ে তার বিচারিক যে লিগ্যাসি তার জন্য হবে একটি সত্যিকার পরীক্ষা। তার প্রথম কাজ হবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।