তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এ সম্মেলন চলবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে সম্মেলন শুরুর আগেই জানানো হলো, দুই বিভাগীয় কমিশনার ও পাঁচ ডিসি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ফলে স্বাভাবিকভাবে ডিসিরা সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না। জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উপলক্ষে করা করোনা পরীক্ষায় দুই বিভাগীয় কমিশনার ও পাঁচ জেলা প্রশাসকের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সোমবার সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,যাদের পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে, তারাই ডিসি সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ডিসিদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছি তাদের গানম্যান, গাড়িচালক এবং তাদের সঙ্গে যারা আসবেন সবাইকে অবশ্যই আরটি পিসিআর পরীক্ষা করে আসতে হবে। এরই মধ্যে দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং পাঁচজন জেলা প্রশাসকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার এবং কক্সবাজার, রাজশাহী, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চুয়াডাঙ্গার ডিসি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ায় সম্মেলনটি হচ্ছে। এ ছাড়া ওসমানী মিলনায়তনে ৭০০ লোক বসতে পারেন, সেখানে ৬৪ জনকে বসানো হচ্ছে। তারা করোনা পরীক্ষা করে আসছেন, প্রয়োজনে আরেক দিন পরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া সম্মেলনটি সংক্ষিপ্ত করে পাঁচ দিনের জায়গায় তিন দিন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রথমে করোনা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আলোচনায় আসবে।এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ভূমি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদার করা, ত্রাণ পুনর্বাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবারকল্যাণ সহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার ডিসি সম্মেলনে ৩ দিনে মোট ২৫টি অধিবেশন হবে। এর মধ্যে কার্য অধিবেশন হবে ২১টি। সংক্রমণের কারণে এবার এ সম্মেলনের মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। তবে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি ভাচ্যুয়ালি সম্মেলনে যুক্ত হবেন। ডিসিরা সম্মেলনে অংশ নেবেন ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে। আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। একই দিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ডিসিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। আর ১৯ জানুয়ারি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
ডিসি সম্মেলনে মন্ত্রী-সচিবদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়। ডিসিরা মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। এ জন্য এ সম্মেলন ও তাদের প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।
জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২ এর কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার হাটবাজার পেরিফেরি ভুক্তরণের সুস্পষ্ট নিদেশনা জারি ক্ষমতা চেয়েছেন ডিসিরা।
জেলা পর্যায়ের সকল কর্মচারীদের বেতন ইএফটির (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) মাধ্যমে প্রদানের প্রস্তাব করেছে মাগুরার ডিসি। এতে করে বেতন উত্তোলনে হয়রানি বন্ধ হবে। ফলে কর্মচারীদের কাজের গতি বাড়বে। চাকরিরত অবস্থায় সরকারি কর্মচারী মারা গেলে তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা চালু করার প্রস্তাব দিয়েছেন সুনামগঞ্জের ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে বলা হয়েছে, চাকরিরত অবস্থায় সরকারি কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে তাদের সন্তানরা লেখাপড়া ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারবে। মৃত কর্মচারীর সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে। ফলে শিক্ষায় ঝরে পড়া হ্রাস পাবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসনের জন্য কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালার পরিবর্তে পৃথক নীতিমালা প্রণয়ণের প্রস্তাব তুলেছেন ঢাকার ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে তার যুক্তি, কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৭ অনুসারে এই ঘরগুলো বন্দোবস্ত দেওয়ায় শুন্য ঘরগুলো পুনরায় নিরানব্বই বছরের আগে ছিন্নমূল পরিবারের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়া সম্ভব হয় না। যেহেতু কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ প্রদানের মূল উদ্দেশ্য ছিলো অনাবাদি কৃষি জমিসমূহ আবাদের আওতায় নিয়ে আসা এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিন্নমূল ও অসহায় জনগণের আবাসনের ব্যবস্থা করা । সতুরাং আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৯৯ বছরের পরিবর্তে ৩০ বছর মেয়াদি জমি বন্দোবস্ত প্রদানের বিধান রেখে আলাদা নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে।
উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব প্রনয়নকালে প্রকল্পের পরিবেশ, জমির শ্রেনী ও তার ব্যবহার এবং সামাজিক প্রভাব জেলা প্রশাসক ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মতামত গ্রহণের প্রস্তাব এ প্রস্তাব দিয়েছেন মাগুরার ডিসি। জেলায় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প কমিটি গঠনের প্রস্তাব কুমিল্লা জেলা প্রশাসকে।
জনপ্রশাসনের পদায়ন নীতিমালায় পরিবর্তন আনয়ণের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা বিভাগীয় কশিনার। জাতি সংঘ মিশনে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তরাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছেন রংপুর বিভাগয়ি কমিশনার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ডেটাবেজে সংরক্ষিত সকল কর্মকর্তার জন্য আইডি কার্ড প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন চাপাইনবাবগঞ্জের ডিসি। এছাড়া দায়িত্ব পালনে আগের চেয়ে আরো বেশি ক্ষমতা চান ডিসিরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসোরের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের চার্টার অব ডিউটিজ সুনিদিষ্টকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন নারায়নগঞ্জের ডিসি। জেলা প্রশাসকের কাযালয়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে ভোলার ডিসি। সড়কের পার্শ্বে অপরিকল্পিত বিদ্যুতের খুটি স্থাপন, তার ঝুলানো রোধকল্পে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণ করা যেতে পারে। এ প্রস্তাব দিয়েছেন নওগা ও মৌলভীবাজারের ডিসি। বিভাগীয় শহরে সরকারি কর্মচারীর হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন নওগাঁর ডিসি।
জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে আমদানি থেকে বিতরণ ব্যবস্থা অনলাইন তথ্যভান্ডার প্রস্তুত করা যেতে পারে। এর যুক্তি হিসেবে জরুরি পরিস্থিতিতে সরকার জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে। এ প্রস্তাব দিয়েছেন মৌলভীবার জেলা প্রশাসক।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং দুনীতি ও স্বজনপ্রীতি রোধ ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগে পুল গঠনের পপ্রস্তাব দিয়েছেন খুলনা জেলা ডিসি। সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যাল, মেডিক্যাল কলেজ ও হাসাপাতাল সিন্ডেকেট এবং পরিচালনা কমিটিতে ডিসিকে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক। নদীভাঙ্গণ এলাকায় শিশুদের ঝড়ে পড়া রোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ স্কীম ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছেন শরিয়তপুরের ডিসি। শিশুদের জন্য সেইফ হোম নিমাণ করা যেতে পারে এ প্রস্তাব দিয়েছেন ভোলার ডিসি। সকল জেলা প্রবীণ নিবাস স্থাপনরে প্রস্তাব দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসি। সকল বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরে কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাব বশিলার জেলার ডিসির। সুন্দরবনের মধ্যে অবাধে লোক চলাচল রহিত করা ও বিকল্প পদ্ধতিতে সুন্দরবনের সম্পদ আহরণণের প্রস্তাব খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের।