সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, প্রবীণ আইনজীবী এবং জিয়াউর রহমানের সময়ের মন্ত্রী টি এইচ খান আর নেই। ঢাকার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বিকাল পৌনে ৫টায় তার মৃত্যু হয়।
টি এইচ খানের বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। টিএইচ খান ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন।
তার বড় ছেলে অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান বলেন, “বার্ধক্যজনিত কারণে বাবার হার্ট ফেইলিউর হয়। দুর্বল হয়ে পড়ায় গতকাল রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।”
টিএইচ খান তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার স্ত্রী বেগম রওশন আরা জোবায়দা খানম ২০১১ সালে মারা যান।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য টিএইচ খান জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তার জানাজা হবে। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পৈত্রিক বাড়ী হালুয়াঘাটে। সেখানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরাস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
টিএইচ খানের পুরো নাম মো. তোফাজ্জল হোসেন খান, জন্ম ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করে ১৯৪৭ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। ঢাকা হাই কোর্টের যাত্রা শুরু হলে তিনি একজন আইনজীবী হিসেবে হাই কোর্টে কাজ শুরু করেন।
১৯৬৮ সালে টিএইচ খান পূর্ব পাকিস্তান হাই কোর্টের বিচারক হিসে্বে যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে অবসর নিয়ে পুনরায় আইনপেশায় যোগ দেন।
১৯৭৪ ও ১৯৭৯ সালে দুই দফা তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি।
জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলে তাতে যোগ দেন সাবেক এই বিচারক। ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জিয়ার মন্ত্রিসভায় আইন, শিক্ষা, ধর্মসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এইচএম এরশাদের সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় এই আইনজীবীকে কারাগারেও যেতে হয়।
টিএইচ খান এশিয়া অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হয়েছিলেন। জেনিভায় হিউম্যান রাইটস কমিশনেরও সদস্য ছিলেন তিনি। আইন পেশা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ কলেজ ও পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষকতাও তিনি করেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলাদা বিবৃতিতে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
তার সন্তানদের মধ্যে বড় ছেলে আফজাল এইচ খান সাবেক সাংসদ, বর্তমানে তিনি আইনপেশায় নিয়োজিত। ফয়সল এইচ খানও আইনজীবী এবং ফজলে এলাহী খান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। একমাত্র মেয়ে ডা. ফাতেমা মাহমুদা খান হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসক।