আর কোনো দিন স্কুলে যাবে না মারিয়া

আর দশটি শিক্ষার্থীর মতই দাদী হোসেনা বেগমের হাত ধরে প্রতিদিন স্কুলে যেত মারিয়া, সহপাঠীদের সাথে লেখা-পড়া করার পাশাপাশি খেলাধুলাও করত। হাসত, গান গাইত, মজা করে ছড়া বলত। দাদীর আদরেই মাতৃ-স্নেহের অভাব পূরণ করে নিত।

এক দুর্ঘটনায় সেই মারিয়া আক্তার সব ছেড়ে চলে গেছে। আর কোনো দিন মারিয়া হাসবে না। সহপাঠীদের সাথে স্কুলে বসে লেখা-পড়ার পাশাপাশি খেলা করবে না। দাদীর হাত ধরে স্কুলে যাবে না। মর্মান্তিক এক অগ্নিদুর্ঘটনা অকালেই ঝরে গেছে অবুঝ শিশু মারিয়া।

মারিয়া (৫) সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা মাস্টার মিশন স্কুলের প্লে­শ্রেণির ছাত্রী ও স্থানীয় পশ্চিম পাড়ার মালয়েশিয়া প্রবাসী মাহফুজ মিয়ার একমাত্র মেয়ে। অগ্নিকা-ের শিকার হয়ে বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সে মারা যায়।

মারিয়ার পরিবার জানায়, গত ২০ জানুয়ারি দুপুরে মারিয়ার গায়ের জামায় অসাবধনতাবশতঃ গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে যায়। ওই দিনই অগ্নিদগ্ধ মারিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, আগুনে তার হাত-পাসহ শরীরের প্রায় আশি ভাগ পুড়ে গিয়েছিল।

১৮ দিন চিকিৎসা শেষে চারদিন আগে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে মঙ্গলবার সকালে সবাইকে কাঁদিয়ে মারিয়া মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও দৈনিক নয়া দিগন্তের সরাইল সংবাদদাতা এম এ করিম, প্রধান শিক্ষক সৈয়দ শাহজাহান মিয়াসহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা মারিয়ার বাড়িতে যান।

সেখানে মায়ের স্নেহে আদর করা দাদী হোসেনা বেগমের কান্নায় যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। মারিয়ার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখে তার কান্না যেন আরো বেড়ে গিয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে সবাই অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন।

পারিবারিক কলহের কারণে, মারিয়ার জন্মের মাত্র ১২ দিনের মাথায় পিতার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন মারিয়ার মা। পরে মারিয়ার পিতা মাহফুজ মিয়া আবার বিয়ে করেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী। ফলে তখন থেকেই দাদীর আশ্রয়ে বড় হয় মারিয়া। মারিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top