উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উচু উচু পাহাড় থেকে সোমেশ্বরীর বুক চিরে বয়ে আসছে শীতল বাতাস। তাপমাত্রা কমে কখনো বা ১০ এর উপরে কখনো বা ১৫ এর মাঝামাঝি।
শীতের এই শুষ্ক তাপমাত্রায় চারপাশের পরিবেশে প্রভাব পডরলেও পুরোপুরি বিপরীত নেত্রকোনার দুর্গাপুরের চিত্র। কনকনে শীতের মাঝেও কাঁদায় ভাসছে শহরের প্রতিটি সড়ক। দেখে বোঝার উপায় নেই এখন শীত নাকি বর্ষা?
অথচ পর্যটন সম্ভাবনাময় এই নগরীর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভৌগলিক নির্দেশক স্বীকৃতি বা জি-আই সনদ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিজয়পুরের সাদা মাটির পাহাড় সহ অসংখ্য পর্যটন স্পট। প্রতিদিনই এই স্পটগুলো দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। প্রকৃতির টানে পর্যটকরা আসলেও তাদের ভাগ্যে জোটে কাঁদা ভরা সড়ক।
২০১০ সাল থেকে শহরটি প্রাণ ও নানা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সোমেশ্বরী নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বালুখেকোদের তান্ডব। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র বালু উত্তোলন সহ অপরিকল্পিত পরিবহনে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে দুর্গাপুর। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সর্তক করলেও লাভ হয়নি কিছুই।
পৌর শহরের পথঘাট সহ বহুল কাঙ্খিত দুর্গাপুর-শ্যামগঞ্জ মহাসড়ক নিয়ে প্রতিনিয়ত ভেজা বালু পরিবহনে কাঁদায় জরাজীর্ণ থাকে সারা বছরই। শহরের প্রেসক্লাব মোড়,তেরি বাজার, কালীবাড়ি মোড়, কলেজ রোড, হাসপাতাল মোড়, উপজেলা মোড়, কাচারি মোড় সহ অলিগলিতেও স্তূপ বেঁধে থাকে কাঁদা। একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে পথচারীদের যাতায়াত তেমনি লোকসানের মুখে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
পৌর শহরের ভেতর দিয়ে বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ সহ কয়েক দফা দাবি নিয়ে গেল বছর স্থানীয়রা লাগাতার আন্দোলন করেও কোন সুফল আসেনি। স্থানীয়দের দুর্ভোগ কাটাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ বালুবাহী ট্রাকের জন্য বাইপাস সড়কের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি গেল এক বছরেও। উল্টো দুর্ভোগ বেড়েছে আরও কয়েকগুণ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর কোন সমীক্ষা যাচাই ছাড়াই জেলা প্রশাসক মাধ্যমে সোমেশ্বরী নদী থেকে পাঁচটি বালুমহাল ইজারা প্রদান করে আসছে। অথচ বালু ট্রাক চলাচলের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাই করতে পারেনি প্রশাসন। নামেমাত্র মাইকিং করে ভেজা বালু পরিবহন নিষেধাজ্ঞা দিলেও এর তোয়াক্কা করে না কেউ। যে যার মত করে যাচ্ছে বালু পরিবহন। আইন থাকলেও নেই এর প্রয়োগ! যার ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
স্থানীয়রা আরো জানান, বালু ব্যবসায়ীরা তাদের আখের গোছাতে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। তাদের কাছে সবাই অসহায়। কারণ আইন প্রণেতারাই আইন অমান্য করে। তাহলে আইন কিভাবে সঠিক পথে চলবে। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি দুর্গাপুর পৌর শহরের ভিতর দিয়ে চলাচল করছে। এমন একটা গাড়িও মিলবে না যারা ভেজা বালু পরিবহন করে না। দুর্গাপুরে শীত, গ্রীস্ম, বর্ষা সবসময়ই রাস্তাঘাটে দেখা মিলবে কাঁদা ও ময়লা পানি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ঠিকমতো করতে পারেনা। সড়কের ময়লা পানি, কাঁদা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভিতরে ছিটে নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র সহ মালামাল। এই অভিশাপ থেকে আমরা কবে রক্ষা পাবো। এই দুর্গাপুর কে বাঁচাতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নিরাপদ সড়ক চাই দুর্গাপুর উপজেলা শাখার সভাপতি নুরুল আলম জানান, পৌর শহরের ভেতর দিয়ে বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবিতে আমরা কয়েকবার মানববন্ধন কর্মসূচি সহ বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোন বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পারিনি। সড়ক দিয়ে চলাচল করা যায় না কাঁদার কারণে। এতদিন করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এখন সবগুলো প্রতিষ্ঠান খুলেছে। ফলে শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে যেতে রাস্তার এপার থেকে ওপারে যেতেও নষ্ট হচ্ছে স্কুল ড্রেস সহ পোশাক-আশাক। আসলে এই দুর্ভোগ আমাদের সবার। বাহির থেকে পর্যটকরা অনেক আশা নিয়ে আমাদের দুর্গাপুরে আসেন। অথচ সড়কের বেহাল দশার কারণে দুর্ভোগ ছাড়া কোন কিছুই দেখতে পারেন না। আমরা এই দুর্ভোগের পরিত্রাণ চাই। আর কতদিন মানুষ এভাবে কষ্ট করবে?
ভেজা বালু পরিবহন বন্ধে প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব উল আহসান। তিনি বলেন, ভেজা বালু পরিবহন দুর্গাপুর বাসীর জন্য একটি দুর্ভোগের কারণ আমরা চেষ্টা করছি এই দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে। এর জন্য আমরা সবসময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ছোট-বড় বিভিন্ন ট্রাককে জরিমানার আওতায় আনছি। বালু মহালের ঠিকাদারদের ভেজা বালু পরিবহন বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করি সকলের প্রচেষ্টা থাকলে ভেজা বালু পরিবহন বন্ধ করা যাবে।