আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের মন খারাপ

‘সরকারের আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, তাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে’, এমন গুজবকাণ্ডে মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন তিনি। এসব মিথ্যা গুজব ছড়ানোকে ঘৃণা করেন বলে জানিয়েছেন পলক। পুরো বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলেও জানান তিনি।

গত ৩ জানুয়ারি এমন একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘সত্যের জয় সর্বত্র। মিথ্যার পরাজয় অনিবার্য। এই গুজব রটনার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হলো, ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। তারা রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়েই যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সকালে যে গুজব ছড়ানো হলো, তা সন্ধ্যায় মিথ্যা বলে প্রমাণিত (পলকের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। তাতে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্পটে সপরিবারে ঘুরে বেড়ানোর তথ্য ও ছবি) হলো। এগুলোকে আমরা কেসস্টাডি হিসেবে নিয়েছি। আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করবো যেকোনও মূল্যে।’

তিনি কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারছেন না মিথ্যা রটিয়ে রটনাকারীরা কী অর্জন করলো। তিনি ফেসবুকে পুরো ভ্রমণের (কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র) তথ্য ও ছবি পোস্ট দিয়ে গুজব রটনাকারীদের জবাব দিয়েছেন। তবু তিনি মনঃক্ষুণ্ন।

এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে জুনাইদ আহমেদ পলক শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) রাতে বলেন, ‘রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে, সে ক্ষেত্রে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এই ধরনের মিথ্যা গুজব ছড়ানোকে আমরা ঘৃণা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সত্য ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে যাবো, মিথ্যাকে পরাজিত করবো, ইনশাআল্লাহ।’

দুই সন্তানসহ করোনা আক্রান্ত এই প্রতিমন্ত্রী জানান, শারীরিকভাবে তিনি এখন ভালো আছেন।

জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি রাতে জুনাইদ আহমেদ পলক কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরেন। তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়ার মতো কোনও ঘটনাই ঘটেনি বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তবে এ সংক্রান্ত গুজব ছড়ালে হলে তিনি সোমবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ফেসবুকে পোস্ট দেন।

তাতে তিনি লিখেছেন, ‘গত ২৫ ডিসেম্বর টরন্টো থেকে (টরন্টো পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ফ্লাইট নম্বর এসি ৭৫১০) বোস্টনে গিয়ে প্রথমবারের মতো বোস্টন শহরটা ভিজিট করলাম। বোস্টনকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম সেরা শিক্ষানগরী। প্রায় ৭০টিরও বেশি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী, যারা বিশ্বের আধুনিক জ্ঞান চর্চা করছে, গবেষণা করছে, উদ্ভাবন করছে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ডিরেক্টর অব হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তরুণ খান্না, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অব হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের হিতেশ হাথি এবং মিনাকে যে, ক্রিসমাসের ছুটি এবং প্রচণ্ড ঠান্ডা থাকা সত্ত্বেও (-৪°) হার্ভার্ডে প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমাদের বাংলাদেশের জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ার জন্য কীভাবে আমরা কাজ করতে পারি—নলেজ পার্টনার হিসেবে, সে বিষয়ে আলোচনা করার জন্য এবং আমাকে হার্ভার্ডে দুপুরে আপ্যায়ন করার জন্য।’

‘এবারই প্রথম আমি বোস্টন থেকে (ডেলটা ৫৭৯৮) ফ্লাইটে ওয়াশিংটন ভ্রমণ করলাম, যার অভিজ্ঞতাও অত্যন্ত ভালো ছিল।’

‘২৫ তারিখে টরন্টো থেকে রওনা হয়ে ২৬, ২৭ তারিখ বিশ্বের অন্যতম শিক্ষানগরী বোস্টন ভিজিট শেষে ২৮ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে পৌঁছাই।’

ফেসবুক পোস্টে পলক আরও জানান, ‘ওয়াশিংটনে এর আগেও আমি দুইবার গিয়েছি এবং ওয়াশিংটনের হিস্ট্রি মিউজিয়াম, সায়েন্স মিউজিয়াম, হোয়াইট হাউজসহ অনেক কিছুই পরিদর্শন করেছি।’

‘এবারের বিশেষত্ব হচ্ছে যে বাংলাদেশের তিন জন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে নিযুক্ত কর্মকর্তা, তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের শখ ছিল তাদের হোয়াইট হাউজ, লিংকন মেমোরিয়াল এবং ওয়াশিংটনের বিভিন্ন মেমোরিয়াল দেখানোর। আর্ট অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়াম ছিল মূল আকর্ষণ। এর সঙ্গে সায়েন্স মিউজিয়াম, ওয়াশিংটন হিস্ট্রি মিউজিয়াম দেখে আমার সন্তান অপূর্ব অর্জন এবং অনির্বাণ ভীষণ খুশি।’

‘আমি আরও ধন্যবাদ জানাই ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলামকে। এই তীব্র শীতের মধ্যে এবং ছুটির মধ্যেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজন করার জন্য।’

‘ধন্যবাদ জানাই, বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাংকে নিযুক্ত আমাদের স্থায়ী প্রতিনিধি শফিউল আলম এবং বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের আরও দুই জন নিযুক্ত কর্মকর্তাকে, তাদের বৈঠক এবং রাতের আপ্যায়নের জন্য।’

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক লিখেছেন, ‘গত ২৫-২৮ (ডিসেম্বর) বোস্টন ও ওয়াশিংটন সফর শেষে ঢাকায় ফিরেছি। আশা করছি, হার্ভার্ড এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। ২০৪১ সালে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, উদ্ভাবনী জাতি এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সফরটি সহযোগিতা করবে।’

‘গত ১ (জানুয়ারি) তারিখ রাত ১০টায় বাংলাদেশে পৌঁছেছি। পৌঁছানোর পরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোলনের স্বীকৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পরিদর্শন এবং পরের দিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য পোস্টটি দিতে দেরি হলো।’

Share this post

scroll to top