ইংরেজিতে হোয়াইট ফ্লাই যা সাধারণত নারিকেলের সাদা মাছি নামে পরিচিত। ২০১৯ সালে দেশে সর্বপ্রথম এই পোকার প্রাদুর্ভাব শণাক্ত করা হয়। এই পোকার আক্রমণে বিগত ২-৩ বছরে নারিকেলের ফলন প্রায় ৩০-৩৫% হ্রাস পেয়েছে।
একটি জরিপের মাধ্যমে এই পোকার মোট ৬১টি হোস্ট উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয় যাদের অধিকাংশই ফলজ বৃক্ষ।যেখানে প্রধান হোস্ট উদ্ভিদ নারিকেল, পেয়ারা এবং কলা গাছ। তাই বর্তমানে ফল চাষীদের জন্যে এই সাদা মাছি এখন বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের কনফারেন্স হলে ওই জরিপের সমাপনী কর্মশালা অনুষ্ঠানে ফলাফল উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন গবেষক দলের প্রধান কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. গোপাল দাস।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে আট মাস মেয়াদী গবেষণায় বিভিন্ন তাপমাত্রায় ওই পোকার বৈশিষ্ট্য এবং ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ার তার জীবন চক্র নিয়ে গবেষণা করা হয়।
গবেষক ড. গোপাল দাস জানান, উচ্চ তাপমাত্রায় ওই পোকার ডিমের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায় এবং ডিম মারা যায়। এই পদ্ধতি নারিকেলের সাদা মাছি বা হোয়াইট ফ্লাই নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কার্যকর আইপিএম মডেল তৈরিতে সহায়ক। জরিপের মাধ্যমে সারা দেশে এই পোকার মোট ৬১টি হোস্ট উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয় যাদের অধিকাংশই ফলজ বৃক্ষ। উদ্বেগজনক বিষয় হলো এই পোকা কয়েকটি মাঠ ফসলেও শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের সকল জেলাতেই এই পোকার কম-বেশি আক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। দেশের পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব জেলাগুলিতে এই পোকার তীব্র আক্রমণ পাওয়া যায়। দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব জেলাগুলিতে এর আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম। প্রধান হোস্ট নারিকেলের পরেই এই পোকার অন্য হোস্ট হিসেবে আছে কলা ও পেয়ারা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, অধিক বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ তাপমাত্রায় এই পোকার প্রাদুর্ভাব অনেকাংশেই কমে যায়। ভিয়েতনাম ও কেরালা থেকে আমদানিকৃত খাটো জাতের নারিকেল গাছে নির্বিচারে বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে যা খুবই উদ্বেগজনক। এই নির্বিচার ব্যবহার চলতে থাকলে এই পোকাটি বেশিরভাগ কীটনাশকের বিরুদ্ধে শারীরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে যা ভবিষ্যতে এর কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এ মাছি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গোপাল দাস বলেন, নারিকেলের সাদা মাছি দমনের জন্য খাটো জাতের নারিকেল গাছে কীটনাশকের নির্বিচার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নারকেল চাষীদের পাশাপাশি সম্প্রসারণ কর্মীদের জন্য মাঠ পর্যায়ে কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাতে তারা নিজেরাই সমস্যা বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে পারে। নারিকেলের সাদা মাছি দমনের জন্য এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো আইপিএম গাইডলাইন (আইপিএম) তৈরী হয়নি । দ্রæত একটি আইপিএম গাইডলাইন তৈরী করে তা নারিকেল চাষিদের মধ্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করা উচিত।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন, বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবু হাদী নূর আলী খান এবং ময়মনসিংহের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর মো. মতিউজ্জামান। গবেষণায় কো পিআই হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিটতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন।