আজ শুভ বড়দিন

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন আজ ২৫ ডিসেম্বর। খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট আজকের দিনে বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন।

সারা বিশ্বের খ্রিষ্টানদের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মের মানুষেরাও ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে আজকের দিনটি উদ্‌যাপন করবেন। গত বছর বৈশ্বিক করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে উৎসব উদ্‌যাপন হয়েছিল সীমিত পরিসরে এবং অনেকটা অনাড়ম্বরভাবে। এখন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকায় গতবারের চেয়ে বড়দিনের আয়োজনে চাকচিক্য কিছুটা বাড়লেও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে মাস্কের ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হবে বলে জানিয়েছেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলের রমনা সেন্ট ম্যারিস ক্যাথিড্রাল চার্চ, তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রানীর গির্জা ও মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা চার্চে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গির্জার ভেতর ও বাইরে নানা রঙের বেলুন, নকশা করা কর্কশিট, রঙিন কাগজ, জরি ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। গির্জা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গাছে ঝোলানো হয়েছে নানা রঙের বাতি। রাতে আলো ঝলমল করছিল গির্জাগুলো। এ ছাড়া তিনটি গির্জার ভেতরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কৃত্রিম ‘ক্রিসমাস ট্রি’।

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, যিশুর জন্ম হয়েছিল জীর্ণ গোয়ালঘরে। সেই বিশ্বাস থেকেই গির্জায় প্রতীকী গোয়ালঘর তৈরি করা হয়েছে। তাতে প্রতীকীভাবে শিশু যিশু ও তাঁর মাতা মেরিসহ অন্যদের তুলে ধরা হয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্মযাজকেরা বলেছেন, নামে ‘বড়দিন’ হলেও আক্ষরিক অর্থে এ দিনটি বড় নয়। এদিনে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা যাতে মন ও হৃদয়ে বড় এবং উদার হতে পারে, তাই যিশুখ্রিষ্টের এ জন্মোৎসবকে বড়দিন বলা হয়।

আজ শনিবার বড়দিন হলেও বিভিন্ন গির্জায় উৎসব উদ্‌যাপন শুরু হয়েছে গতকাল সন্ধ্যার প্রার্থনা অনুষ্ঠানের পর থেকেই। মোহাম্মদপুর গির্জায় গতকাল রাত ৯টায় এবং তেজগাঁও গির্জায় সন্ধ্যা ৭টা ও রাত ১০টায় প্রার্থনা হয়েছে।

তেজগাঁও পবিত্র জপমালা রানীর গির্জার পালক পুরোহিত ফাদার সুব্রত বনিফাস গোমেজ বলেন, ‘পাপ স্বীকারের মাধ্যমে খ্রিষ্টানরা বড়দিনের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি নেয়। আমরা যেসব অন্যায়-অপরাধ করি, সেগুলো যাজকের কাছে গিয়ে স্বীকার করি এবং ঈশ্বরের ক্ষমা লাভ করি। এভাবে প্রভু যিশুকে আমাদের অন্তরে বরণ করে নিতে প্রস্তুত হই।’

এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকায় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বাইরের লোকসমাগম হয়, এমন উৎসব উদ্‌যাপনে খ্রিষ্টভক্তদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে গির্জার বাইরে কোনো আনুষ্ঠানিকতা রাখা হচ্ছে না।

বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ ওএমআই বড়দিনে সবাইকে ভ্রাতৃত্ব, একতা ও সম্প্রীতি স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যাতে ধর্মেরও ঊর্ধ্বে গিয়ে সবার মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করি। কারণ, পৃথিবীতে পরিবার একটাই, সেটা মানব পরিবার। একটি পরিবার গড়ে তুললে এ পৃথিবী অনেক সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হবে।’

বড়দিনকে ঘিরে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলগুলোও বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে। রঙিন আলোকসজ্জায় ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সাজানো হয়েছে বিভিন্ন হোটেলে। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, উৎসব উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। হোটেলের লবিতে ও ক্যাফে বাজার রেস্তোরাঁয় ক্রিসমাস ট্রি হাউস ও সান্তা ক্লজ বিভিন্ন আলোকসজ্জার মাধ্যমে সুসজ্জিত করা হয়েছে। হোটেলটির জনসংযোগ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাফিউজ্জামান বলেন, সান্তা ক্লজ ও তাঁর বন্ধুরা হোটেলে আসা শিশুদের চমকপ্রদ উপহার দিয়ে বরণ করবেন। বড়দিন উপলক্ষে হোটেলের সুইমিংপুলের পাশে ওয়েসিস গার্ডেনে শিশুদের জন্য ‘কিডস কার্নিভ্যাল’ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলায় শিশুদের জন্য জাদুর খেলা, পাপেট শোসহ নানা আয়োজন থাকবে।

অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে আজ তৈরি হবে বড়দিনের বিশেষ কেক। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেন। বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি থাকবে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়দিন উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা দেশের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান।

Share this post

scroll to top