‘রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদানে স্বচ্ছতা চাই’ দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)। সম্মেলনে রোহিঙ্গা সহায়তায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান ২০১৯-এর আওতায় স্থানীয়করণ ও দ্বন্দ্ব নিরসনে দলিল-এর সংবেদনশীলতার যৌক্তিকতাসহ বিভিন্ন দিক আলোকপাত করা হয়।
সোমবার দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সিসিএনএফ-এর কো-চেয়ার রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে আবু মোর্শেদ চৌধুরী, অশোক কুমার সরকার, জাহাঙ্গীর আলম বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এই ফোরামের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, কর্মকর্তাদের দামি গাড়ি, বেশি বেতনে চাকরি ও ফাইভ স্টার হোটেলে থাকা-খাওয়াসহ আলিশান জীবনযাপনে এসব অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।
সিসিএনএফ এর কো-চেয়ারম্যান আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোট ১২৩টি দেশি-বিদেশি এনজিও কাজ করছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিও রয়েছে ২১টি এবং কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও রয়েছে ৫টি। অন্যান্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কাজ করছে। এসব এনজিও বিভিন্নভাবে অর্থ এনে রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয়ের কথা বলছে। তবে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোতে এসব অর্থের একটি অংশ ব্যয় করা হচ্ছে কর্মরত কর্মকর্তারা বিলাসিতায়।’
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) অনুযায়ী রোহিঙ্গা সংকট মেটাতে বাংলাদেশের মোট ৪৩৪.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন ছিল। এর মধ্যে ৩১৬.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জেআরপি পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়। যা ২০১৭ সালে প্রাপ্ত মোট তহবিলের ৩৫.৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশে মোট ৪৯৪.২ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গ্রহণ করা হয়েছিল। একইভাবে ২০১৮ সালে জেআরপি অনুসারে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৯৫০.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। যার বিপরিতে মোট ৬৫৫.০ মিলিয়ন (৬৮.৯ শতাংশ) মার্কিন ডলার অর্থ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আসে। অন্যদিকে এই পরিকল্পনার বাইর থেকে এসেছে মোট ৭২.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি ২০১৯ সালে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের আওতায় ৯২৫.০ মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি পরিবারের জন্য এক বছরে ২১৫ মার্কিন ডলার ব্যয় করার জন্য ধরা হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ওপরে উল্লেখিত হিসাব অনুযায়ী সব অর্থ এই পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় হয়নি। আমরা অসংখ্যবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে এই বার্তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। আমাদের দাবি হচ্ছে, সরকারিভাবে এসব এনজিওর নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। যানবাহন ব্যয় কমাতে হবে এবং বিদেশি এনজিওগুলোর আলিশান জীবনযাপনের প্রতি বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ স্থানীয়দের চাকরি দিতে হবে। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আগামীতে রোহিঙ্গা সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে কক্সবাজারে।’
সরকার এসব এনজিওদের নিয়মিত মনিটরিং করে যানবাহন ব্যয় কমিয়ে বিদেশী এনজিওদের আলিশান জীবন যাপনের প্রতি বিধি নিষেধ আরোপ করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ স্থানীয়দের চাকরি দেয়ার দাবি জানানো হয়।