পুঁজিবাজারে আবার কী হচ্ছে?

আর্থিক তিনটি খাত ব্যাংক, বীমা ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হারানো দর ফিরে পাওয়ায় বড় পতন থেকে রক্ষা পেয়েছে পুঁজিবাজার। গতকাল লেনদেনের শুরু থেকে সৃষ্টি হওয়া বিক্রয়চাপ দুই পুঁজিবাজার সূচককে বড় পতনের দিকে এগিয়ে নেয়। কিন্তু শেষদিকে উল্লিখিত খাতগুলো হারানো দর ফিরে পাওয়ায় উভয় বাজারের বড় পতন থেকে রক্ষা পায়। দিনশেষে বাজারগুলোতে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।

প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ২৯ দশমিক ৮২ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ৫ হাজার ৭৬৩ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ৭৩৩ দশমিক ৯১ পয়েন্টে। তবে দিনের মাঝামাঝি সময়ে সূচকটি একবার ৫ হাজার ৭১০ পয়েন্টের ঘর ছোঁয়। পরবর্তিতে হারানো সূচকের অনেকটা ফিরে পায় বাজারটি। একই সময় ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় ২১ দশমিক ৬৫ ও ৮ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে ২১ দশমিক ৮২ ও ১১ দশমিক ১৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ হারায় ৪ দশমিক ০৯ ও ৩ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট।
দিনের শুরুতে সৃষ্ট বিক্রয়চাপ দীর্ঘায়িত হলে উভয় বাজারই গতি হারায় গতকাল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রথম ১ ঘণ্টায় যেখানে ২২৫ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে সেখানে ২ ঘণ্টা পর বাজারটির লেনদেন দাঁড়ায় ৩৬০ কোটি টাকা। লেনদেনের গতি হারানো বাজারটি দিনশেষে ৭১৯ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৯৩ কোটি টাকা কম। গত রোববার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৮১২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এখানে ২৭ কোটি টাকা থেকে ২১ কোটিতে নেমে আসে লেনদেন।
এদিকে আইপিও অনুমোদন পাওয়া নিউলাইন ক্লদিংস লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কোম্পানিটি সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি থেকে আইপিওর সম্মতিপত্র পেয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২৭ নভেম্বর বিএসইসির ৬৬৭তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির আইপিওর অনুমোদন দেয়া হয়। তথ্যমতে, কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে ৩ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। কোম্পানির আইপিওর প্রতিটি লটে ৫০০টি শেয়ার রয়েছে, একজন বিনিয়োগকারীর প্রতিটি লটের জন্য আবেদন করতে ৫ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে।

প্রকাশিত প্রস্পেক্টাস অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি প্লান্ট ও মেশিনারি অধিগ্রহণে ৩৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, কারখানা ভবন নির্মাণে ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ, আংশিক ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ৩০ শতাংশ এবং আইপিও বাবদ ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ ফান্ড ব্যবহার করবে। ৩০ জুন ২০১৭ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানির বেসিক শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৮৫ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির পুনর্মূল্যায়নসহ নিট সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৬৩ পয়সা এবং সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া এনএভি হয়েছে ২০ টাকা ৫২ পয়সা। বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, সন্ধানী লাইফ ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে।

গতকাল লেনদেনের শুরুতেই বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে দুই বাজার। ঢাকা বাজারে ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৭৬৩ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড চাপের শিকার হয়। বেলা ১টার পর সূচকটি নেমে আসে ৫ হাজার ৭১০ পয়েন্টে। এ সময় ডিএসই সূচকের অবনতি রেকর্ড করা হয় ৫৩ পয়েন্ট। দুপুর দেড়টার দিকে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাজার। এ সময় আর্থিক খাতগুলো ধীরে ধীরে দর ফিরে পেতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে এগিয়ে যায় বীমা খাত। এ খাতের কমপক্ষে ২০টি কোম্পানি দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে পৌঁছে যায়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতেও দাম বাড়ে বেশির ভাগ কোম্পানির। ফলে ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে সূচক। এভাবে একপর্যায়ে হারানো সূচকের বেশ কিছুটা ফিরে পায় বাজারটি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top