বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে অনেক নাটকীয়তার পরও দুই গ্রুপকে মেলানো যায়নি। আলাদাভাবেই ইজতেমায় অংশ নিচ্ছে তারা। সরকার দুই পক্ষকে দুই দিন করে মোট চার দিন সময় দিলেও নিজেরা আগে পিছে আরো একদিন করে বাড়িয়ে মোট ছয় দিন ইজতেমা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রথমে মাওলানা সাদ কান্দলভি বিরোধীরা ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি এবং ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাদপন্থীরা ইজতেমা পরিচালনা করবেন। গতবারের মতো এবারো মাওলানা সাদ ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন না। তার পরিবর্তে দেশের মুরব্বিরাই দুই পর্বের আখেরি মুনাজাত করবেন।
গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গীতে তাবলিগের দুই গ্রুপের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় দুই জন মারা যান। আহত হন আরো অনেকে। এতে অনেক আগে থেকেই চলে আসা দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়। দুই পক্ষ পৃথকভাবে ইজতেমা করার তারিখ ঘোষণা করে। ফলে প্রতি বছর জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করলেও এবার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি টিম ভারতের দেওবন্দ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত যায়নি। এরপর স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তাবলিগের দুই গ্রুপকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর দুই দফায় তিন দিন করে মোট ছয় দিন ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে এলেও এবার সবাইকে নিয়ে এক পর্বে মাত্র তিনদিন ইজতেমা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে দোয়া পরিচালনা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ইজতেমার সময় একদিন বাড়িয়ে ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিন ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
এ ক্ষেত্রে একসাথে দুই গ্রুপের ইজতেমা করার কথা থাকলেও এবার পৃথকভাবে দুই দিন করে দুই গ্রুপের ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। মোট ১০টি শর্তে প্রথমে ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি সাদবিরোধী এবং ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি সাদপন্থীদের জন্য ইজতেমার দিন নির্ধারিত হয়। এ শর্তানুসারে সাদবিরোধীরা ইজতেমার মাঠ প্রস্তুত করবেন। তারা ১৬ ফেব্রুয়ারি মাগরিবের আগে মুনাজাতের মধ্য দিয়ে চলে যাবেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি ফজর নামাজের পর সাদপন্থীরা মাঠে প্রবেশ করবেন। সাদবিরোধী বিদেশীরা তাদের ইজতেমা শেষে আশকোনা হজ ক্যাম্পে অবস্থান করবেন। ভারতের নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সাদ, আহমদ লাট ও ইব্রাহিম দেওলা কেউই ইজতেমায় অংশ নেবেন না ইত্যাদি।
তবে জানা যায়, এসব শর্তের পরও তাবলিগের দুই গ্রুপ তাদের দুই দিনের সাথে একদিন করে বাড়িয়ে তিনদিন করে ইজতেমা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বেফাকের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের এক বৈঠকে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই ইজতেমা শুরু করার ঘোষণা দেয়া হয় এবং সে অনুসারে তাদের অনুসারীদের মাঠে আসার আহবান জানানো হয়। এই পক্ষটি মূলত মাওলানা সাদবিরোধী হিসেবে পরিচিত। গতকাল আরেক বিবৃতিতে বেফাক সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার) বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে জানিয়ে এই ইজতেমায় সারা দেশের আলেম-ওলামা, ছাত্র-জনতা এবং তাবলিগের সাধারণ সাথীদের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তারা আখেরি মুনাজাত করবেন।
এ দিকে মাওলানা সাদপন্থীরাও তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারির সাথে ১৯ ফেব্রুয়ারি তিন দিন ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি ফজর নামাজের পর মাঠে প্রবেশ করে তারা ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আখেরি মুনাজাত করবেন।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে ইজতেমা চার দিন হচ্ছে বলেই জানানো হচ্ছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক নির্দেশনা থেকে জানা গেছে, ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের যেন কোনো ধরনের বাধা প্রদান না করা হয় এবং ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে তাদের যাতায়াত ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আনিছুর রহমানও ইজতেমা চার দিন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে বিগত সময়ে আগে থেকেই মাঠে মুসল্লিরা এসে থাকেন জানিয়ে তিনি বলেন, সে লক্ষ্যেই হয়তো তারা আগে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আল্লামা আহমদ শফীসহ শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের আহবান : বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সভাপতি ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, দাওয়াত ও তবিলগের মেহনত আমাদের ওলামায়ে কেরামের দ্বীনি আমানত। এই আমানতের যথাযথ হেফাজত করা আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব। এ মেহনতের গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসূচি হচ্ছে টঙ্গী ময়দানের বিশ্ব ইজতেমা। আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার) বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। এ ইজতেমায় সারা দেশের আলেম-ওলামা, ছাত্র-জনতা এবং তাবলিগের সাধারণ সাথীদের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের ইজতেমাও সুশৃঙ্খল ও নিরাপদভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে সরকারিভাবে এবং ইজতেমার পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিবৃতি প্রদানকারী অন্যরা হলেন, বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, বেফাকের সহসভাপতি ও যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, ইত্তেহাদুল মাদারিসা বাংলাদেশের সভাপতি ও পটিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারি, জিরি মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ তৈয়ব, বেফাকুল মাদারিস গওহরডাঙ্গার সভাপতি মুফতি রুহুল আমীন, তানজিমুল মাদারিস বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা আরশাদ রহমানী, আজাদ দ্বীনি এদারা বাংলাদেশের মহাসচিব হজরত মাওলানা আব্দুল বছির প্রমুখ।