শরীয়তপুর সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বুধবার সকালে উপজেলার চিতলীয়া বাজারে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুস সালাম হাওলাদার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন-অর রশীদ হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
উভয়পক্ষ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পালং মডেল থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার জানান, গত সোমবার রাতে সদর উপজেলার মজুমদারকান্দি এলাকার চিতলীয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুস সালাম হাওলাদারের সমর্থক লিটন বেপারি, আউয়াল সরদার, সৈয়াদ সরদার আংগারিয়া বাজারে যাচ্ছিলেন।
পথে চিতলীয়া বাজারের কাছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন-অর রশীদ হাওলাদারের সমর্থক জাহাঙ্গীর হাওলাদার রফিক মৃধাসহ ১০-১২ জন মিলে তাদের গতিরোধ করেন। এর পর তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে তাদের বেদম মারধর করে আহত করেন।
এর জের ধরে মঙ্গলবার রাতভর দেশীয় অস্ত্রসহ বোমার মজুর করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বুধবার সকালে দুপক্ষের সমর্থকরা চিতলীয়া বাজারে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় একে ওপরের ওপর বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। শরীয়তপুর পালং মডেল থানার পুলিশ, ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বোমার আঘাতে ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে উভয়পক্ষের রাসেদ মাদবর (৩৫), এমদাদ চৌকিদার (৪৫), কাসেম চৌকিদার (৫০),জাহাঙ্গীর হাওলাদার (৪০), সাবেক মেম্বার হাবিবুর রহমার হবি মাদবর (৫৫), মকবুল হাওলাদার ( ৪৫), আবু গনি চৌকিদার (৫৫), ফারুক হাওলাদার (৪০), আনোয়ার মাদবর (৪২), আবদুল হালিম হাওলাদার (৩০), আবদুল আলিম হাওলাদার (৪৫), এসকেন সরদার (৭০), হাবিব হাওলাদার (৩০), ইমাম বেপারি (৫০), সোহাগ হাওলাদার (৪৯), কাওসার হাওলাদার (২৫), বজলু চৌকিদার (৪৫), মজনু চৌকিদার (৫০), রতন হাওলাদার (৪০), নুরুল আমিন হাওলাদার (৪০), মোতালেফ হাওয়াদান (৫৫), মোশারফ হাওলাদার (৬০), হাসেম মাদবর (৪০), সাইফুল ইসলাম (২৫), মাসুদ রানা (২৫), জাজির হালাদার (৩৫), জালাল হাওলাদার (৪০), রুহুল আমিন বেপারি (৩৫), নুরু উদ্দিন (৫০), আহম্মদ বেপারী (৩০), ইমাম হোসেন বেপারিসহ (৪৮) অন্তত ৫০ জন আহত হন।
আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে; বাকিদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে চিতলীয়া বাজারে ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও একটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের ক্লাবঘর ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা প্রায় শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে পুরো ইউনিয়নে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বোমা হামলায় আহত আবু গনি চৌকিদার বলেন, সকালে চিতলীয়া বাজারে চা-নাস্তা করতে যাই। এ সময় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার ডান কাধে এসে বোমা লাগে। এতে আমার পিঠের কিছু অংশ ও কানের কিছু অংশ পুড়ে যায়। কোনোমতে আমি প্রাণে রক্ষা পাই।
চিতলীয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সভাপতি আহত কাওসার হাওলাদার বলেন, জীবনে অনেক মারামারি দেখেছি। এ রকম বৃষ্টির মতো বোমার বিস্ফোরণ দেখিনি।
এ ব্যাপারে সালাম হাওলাদারের সমর্থক মানিক হাওলাদারকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন-অর রশীদ হাওলাদার বলেন, চিতলীয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সালাস হাওলাদারের সমর্থক মানিক হাওলাদারের নির্দেশে আমাদের ক্লাবে ও বাজারে হামলা করা হয়। এতে আমাদের ২৫-৩০ কর্মী-সমর্থক আহত হন। এর পর বাজারের ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের লোকজন মিলে সন্ত্রাসীদের গণপিটুনি দিয়ে বাজার থেকে তাড়িয়ে দেয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমার চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, আমার ৩ সমর্থককে হারুর হাওলাদারের সমর্থকরা কুপিয়ে পিটিয়ে মারান্তকভাবে আহত করে। বুধবার সকালে মানিক হাওলাদার ও সাত্তার হাওলাদার চিতলীয়া বাজারে গেলে তাদেরও লাঞ্ছিত করে হারুর হাওলাদারের সমর্থকরা। এ নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আমার ২০-২৫ জন আহত হয়।
পালং মডেল থানা ওসি মো. আক্তার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার চিতলীয়ার একটি ছোট ঘটনা কেন্দ্র করে বুধবার সকালে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুর-অর রশীদ হাওলাদারের সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ মামলা করতে আসেনি।