বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা দেখলেও যুক্তরাজ্যের কাছে বড় বাধা দুর্নীতি

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তৃতীয় বৃহত্তম গন্তব্য যুক্তরাজ্য। পাশাপাশি, এ দেশে বিনিয়োগ রয়েছে বহু ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। তাদের সরকারি ওয়েবসাইটেও বাংলাদেশে ব্যবসা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদ বিবরণ রয়েছে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নানা সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। আর তার মধ্যে ওপরের দিকে রয়েছে চরম দুর্নীতি সমস্যা।

যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে এসব তথ্য যুক্ত করা হয় ২০১৪ সালে। আর তা সবশেষ হালনাগাদ হয়েছে ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই। এ কারণে বেশ কিছু তথ্য পুরোনো মনে হতে পারে।

ব্রিটিশ সরকারের চোখে বাংলাদেশে ব্যবসার সুবিধা

২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চায় বাংলাদেশ। দেশটিতে অন্তত ১০০ ব্রিটিশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে এইচএসবিসি, ইউনিলিভার, জিএসকের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাংলাদেশে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা কাজ করতে এলে যেসব সুবিধা পাবেন, তার মধ্যে রয়েছে- এ দেশে ইংরেজি বহুল ব্যবহৃত একটি ভাষা, ব্রিটিশ পণ্যকে বাংলাদেশি ব্যবহারকারীরা বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন। এ দেশে ব্রিটিশ পণ্য, যন্ত্রপাতি ও পরিষেবার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানে যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশি বাজারের শক্তি সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকার বলেছে, গত ১৬ বছরে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে অন্তত ৫ দশমিক ৩ শতাংশ করে। ক্রেডিট রেটিং স্থিতিশীল। গত এক দশকে দারিদ্র্য কমেছে প্রায় অর্ধেক। তাদের শ্রমবাজার প্রতিযোগিতামূলক। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি পাঁচ বছরে চারগুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশে ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ

ব্রিটিশ সরকারের তথ্যমতে, বিশ্ব ব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৩ (২০২০ সালের তালিকায় ১৬৮তম)। বাংলাদেশের ক্রয় পদ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব দেখা যায়। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ব্যাপক। দেশের বাজার অত্যন্ত মূল্য সংবেদনশীল এবং অনেক খাতেই চীন-ভারতের কম দামি পণ্য আধিপত্য বিস্তার করে।

বড় বাধা দুর্নীতি

যুক্তরাজ্যের চোখে বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক বড় বাধা দুর্নীতি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি সূচকে এ দেশের অবস্থান ১৪৫তম (২০২০ সালে ১৪৬তম)।

ব্রিটিশ সরকারের মতে, দুর্নীতি বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছু প্রভাবিত করে এবং প্রায়ই বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে ‘স্পিড মানি’ (ঘুস) এড়ানোই বাংলাদেশে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা প্রায়ই ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন।

ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের জন্য অপার সম্ভাবনা বাংলাদেশে

১. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশ মানবসম্পদের ওপর বেশি নির্ভরশীল। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশই শিক্ষার্থী। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা খাতকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। এখানকার শিক্ষা খাতে নানা কর্মসূচিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্ব ব্যাংক, ইউনিসেফের মতো সংস্থাগুলো অর্থায়ন করেছে। এখন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রদানকারীরা বাংলাদেশে ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার খুলতে এবং তাদের কর্মসূচি চালু করতে পারে।

২. জ্বালানি
প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের একমাত্র স্থানীয় অ-নবায়নযোগ্য শক্তি, যা প্রচুর পরিমাণে উত্পাদিত ও ব্যবহৃত হয়। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৮৫ শতাংশই গ্যাসনির্ভর। সার উৎপাদনের জন্যেও এখানে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে।

এই খাতে যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যন্ত্রাংশ ও উপকরণ সরবরাহ, পরামর্শ সেবা, বিদ্যুৎপ্রকল্প বাস্তবায়নে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

৩. পরিবেশ ও পানি
এই খাতে ব্রিটিশি প্রতিষ্ঠানগুলো যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও পরামর্শ দিতে পারে।

৪. তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি)

উচ্চ চাহিদার কারণে বাংলাদেশে সফটওয়্যার ও আইসিটি শিল্প দ্রুত বড় হচ্ছে। এই খাতে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, বিজনেস প্রোসেস আউটসোর্সিংয়ের (বিপিও) জন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এবং পরামর্শক সেবা চালু করতে পারে।

৫. জৈবপ্রযুক্তি ও ফার্মাসিউটিক্যাল

জীববিজ্ঞান বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল খাতগুলোর একটি। এখানে অনেক প্রতিষ্ঠানই বিদেশি বিনিয়োগকারী খুঁজছে। এরপরও টিকা, অ্যান্টি-ক্যান্সার, হেমাটোলজিক্যাল, বায়োটেক পণ্য আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে।

৬. স্টার্টআপ

বাংলাদেশে মাত্র ১১ দিনে ব্যবসা চালু করা যায়। সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি রপ্তানি, অফিস চালু অথবা পরিবেশক নিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু চালাতে পারে।

Share this post

scroll to top