লোকসাহিত্যের আশ্চর্য সৃষ্টি ‘পালাগান’ নেত্রকোনা জেলার অমূল্য সম্পদ। মহুয়া, মলুয়া, মদিনা, কমলা, চন্দ্রবতী, কঙ্ক লীলার পালাগুলো যেন হাওড়ের পলি মাটির উর্বর সৃষ্টি। কেন্দুয়ার লোকসাহিত্য-সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র মাধ্যমে ওই পালাগুলোই শুধু বাংলা সাহিত্যকে উপহার দেননি বরং পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আমাদের শক্তিমান মহিলা কবি চন্দ্রবতীর সঙ্গে। পাশাপাশি লোকসংগীত, ছড়া, প্রবাদ, প্রবচন, ধাঁধা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোহাম্মদ সিরাজুদ্দিন কাসিমপুরী, রওশন ইজদানীর নাম ভুলে গেলে আমাদের চলবে না। পালাগানগুলো ঢপ, পালা ও যাত্রাশিল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে পরিবেশনের চমৎকার সংস্কৃতি নেত্রকোনার মাটিতে চলমান ছিল। খুরশীমূল, পঞ্চানন দাসের ঢপের দল, আনোয়ার উদ্দিন, হরিপদ, রমেশ আদিত্য, গৌরাঙ্গ আদিত্যের যাত্রাপালা নেত্রকোনার গণ্ডি পেরিয়ে সারা বাংলার মানুষের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল।
ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাঞ্চলে অর্থাৎ নেত্রকোনা অঞ্চলে কবে কখন বাউলগানের বিস্তার ঘটে-তা আজ নির্ধারণ করা কঠিন। তবে বাউলাই, ধলাই, ধনু, বেতাই কিংবা নিতাই নদীর মতো বাউল গান এ অঞ্চলকে জড়িয়ে রেখেছে শত শত বছর ধরে। বাউলদের আদিধারা ‘বৈঠকি বাউল’-এর পাশাপাশি নেত্রকোনার বাউল রশিদ উদ্দিন প্রচলন করেন ‘মালজোড়া বাউল’ ধারার গান। গানের ভেতর দিয়ে তথ্য ও তত্ত্বের বাগ্যুদ্ধে, ধরাটের (প্রশ্ন) পর ধরাটে (প্রশ্ন) জমে ওঠে মূলত মালজোড়ার আসর। বাউল চান খাঁ পাঠান, জালাল উদ্দীন খাঁ, মিরাজ আলী, কমল মিয়া, ইদ্রিছ মিয়া, আব্দুল মজিদ তালুকদার, আলী হোসেন, তৈয়ব আলী, অন্ধ খোরশেদ মালজোড়ার ধারার বাউল গানকে কিংবদন্তিতুল্য স্তরে উপনীত করেন। তা ছাড়া নেত্রকোনার বাউলরা সোহংবাদী মতাদর্শের অনুসারী ছিলেন বলেই কেন্দুয়ার বাউল জালাল খাঁ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য লিখতে পেরেছেন-
‘মানুষ থুইয়া খোদা ভজ/এই মন্ত্রণা কে দিয়াছে
মানুষ ভজ কোরান খোঁজ, পাতায় পাতায় সাক্ষী আছে।’
ভাটির দেশে মৃদু বাতাসের তালে পানির ঝলাৎ ঝলাৎ শব্দে উদাস মাঝির কণ্ঠে যে গানের সৃষ্টি হয়েছে তাই ভাটিয়ালি গান। শাহ্ আব্দুল করিম, কবি নিবারণ পণ্ডিত, জং বাহাদুর, উমেদ আলী, উকিল মুন্সী, সুনীল কর্মকার, সিরাজ উদ্দিন খান পাঠান, ধনু সাত্তার, সালাম সরকারের হাত ধরে ভাটিয়ালি গান উজানের দেশেও পরিচিত হওয়া শুরু করেছে।
নেত্রকোনা ও এ অঞ্চলের লোকায়ত জীবন এবং সাহিত্যকে উপজীব্য করে মূল্যবান প্রবন্ধ রচনার ইতিহাস বেশ আগের। চন্দ্রকুমার দে (১৮৮৯-১৯৪৬), মোহাম্মদ সিরাজুদ্দিন কাসিমপুরী (১৯০১-১৯৭৯) এর পথ অনুসরণ করে লোকসাহিত্য সংগ্রাহক রওশন ইজদানী (১৯১৭-১৯৬৭)-এর ‘মোমেনশাহীর লোকসাহিত্য’, ‘পূর্ব বাংলার লোকসাহিত্য’ প্রভৃতি, বহুভাষাবিদ গোলাম সামদানী কোয়ায়শী (১৯৩০-১৯৯১)-এর ‘আরবি সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’, ‘সাহিত্য ও ঐতিহ্য’, ‘ঐতিহ্য অন্বেষা’ প্রভৃতি, অধ্যাপক যতীন সরকার (১৯৩৬)-এর ‘পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু-দর্শন’, ‘পাকিস্তানের ভূতদর্শন, ‘বাংলার প্রাকৃতজনের দর্শন’, ‘মুক্তবুদ্ধির চড়াই উতরাই’ প্রভৃতি, শিক্ষাবিদ মতীন্দ্র চন্দ্র সরকার (১৯৪০)-এর ‘কালান্তরে শিক্ষা’, ‘ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলের লোক-ঐতিহ্য’, ‘শিক্ষা ও প্রযুক্তি’ প্রভৃতি মননশীল লেখক মাহবুব তালুকদার (১৯৪১)-এর ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’, ‘বধ্যভূমি’, ‘আমলার আমলনামা’ প্রভৃতি, গণমানুষের কবি নির্মলেন্দু গুণ (১৯৪৫)-এর ‘বাঙালির জন্মদিন ও অন্যান্য প্রবন্ধ’, ‘স্মৃতিশক্তি ও অন্যান্য প্রবন্ধ’, ‘অগ্রন্থিত জার্নাল’ প্রভৃতি লোকসাহিত্য গবেষক হামিদুর রহমান (১৯৪৬)-এর ‘নেত্রকোনার বাউল কবি’, ‘মুক্তিযুদ্ধ একাত্তর’, ‘আটপাড়ার মুক্তিযুদ্ধ’ প্রভৃতি, চিন্তাশীল প্রাবন্ধিক খগেশকিরণ তালুকদার (১৯৪৮-২০০৭)-এর ‘বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পকলা’, ‘ময়মনসিংহের জনসমাজ’ প্রভৃতি, গোলাম এরশাদুর রহমান (১৯৪৮-২০২০)-এর ‘নেত্রকোনার বাউল গীতি’, ‘নেত্রকোনার লোকগীতি পরিচয়’, ‘লোকায়ত নেত্রকোনা’ প্রভৃতি, আলী আহাম্মদ খান আইয়োব (১৯৬১)-এর ‘নেত্রকোনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’, ‘গারো পাহাড়ের আদিবাসী’, ‘ময়মনসিংহে রবীন্দ্রনাথ’ প্রভৃতি, অধ্যাপক বিধান মিত্র (১৯৬৯)-এর ‘প্রাবন্ধিক বঙ্কিমচন্দ্র’, ‘স্বামী বিবেকানন্দ: ধর্ম-দর্শন-বিবেকের প্রতিকৃতি’, ‘জ্যোতির্ময় যতীন সরকার’ প্রভৃতি ব্যক্তি ও তাদের রচিত প্রবন্ধগ্রন্থগুলো ভাবের উৎকর্ষ ও সুকুমারবৃত্তির চর্চাকে প্রসারিত করতে সহায়তা করেছিল।
নেত্রকোনায় কথাসাহিত্য রচনার হাতেখড়ি হয় সম্ভবত ঘাগড়া জমিদার বাড়িতে। আশালতা সিংহ ত্রিশের দশকের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ছিলেন। তার রচনা ‘বেদনার অশ্রু’, ‘হতভাগী’, ‘লকেট’ উত্তর আকাশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ছিল। গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে খালিয়াজুরীর সুধীর কুমার চৌধুরী রচনা করেন ‘রাহুর প্রেম ও অন্যান্য গল্প’, যৌবনের ছিট ও অন্যান্য গল্প’ এবং পরে কথাসাহিত্যের ধারা দিনকে দিন বেগবান হয়েছে। আটপাড়ার সোনাজোড় গ্রামের খালেকদাদ চৌধুরী এর ‘চাঁদবেগের গড়’, ‘রক্তাক্ত অধ্যায়’, ‘একটি আত্মার অপমৃত্যু’, ‘রক্ত আকর’, ‘শতাব্দীর দুই দিগন্ত’ প্রভৃতি, আইনজীবী দুর্গেশপত্র নবীস ‘মীরামিত্র’, দুর্গাপুরের প্রতিমা দারিং-এর ‘কেউ জানে না’, ‘পাহাড়ী মেয়ে’, পূর্বধলা উপজেলার ইচুলিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন এর ‘বৃদ্রোবিত’, ‘আপোষ’ তৎকালীন সময় ও সমাজে বেশ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সফল ও জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের হুমায়ূন আহমেদ। তিনি কথাসাহিত্যে কিংবদন্তিতুল্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। ‘নন্দিত নরকে’, ‘মিসির আলি! আপনি কোথায়?’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘এবং হিমু’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দেওয়াল’, ‘জলকন্যা’, ‘আয়নাঘর’সহ দুই শতাধিক উপন্যাস তিনি রচনা করেন। হুমায়ূন আহমেদের অনুজ জাফর ইকবালও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য লেখকগণ ছাড়া সদর উপজেলার এম তাহের উদ্দিন, শৈলেশ চৌধুরী, অধ্যাপক খালেদ মতিন, মো. রুহুল আমিন তালুকদার, কাসেম মণ্ডল, গাজী আব্দুল আউয়াল, দেলোয়ার হোসেনের মতো প্রতিশ্রুতিশীল নবীন কথাসাহিত্যিকরা নিয়মিত সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রেখেছেন।
কবিতা হচ্ছে শক্তিশালী অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত বয়ান, যা গভীর আবেগ থেকে উৎপত্তি এবং শান্তির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নেত্রকোনার কবিগণ যুগ যুগ ধরে সেই আবেগ ও বয়ানকে কবিতার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করছেন। নেত্রকোনার পলল ভূমি, পলল ভূমির ধান, নির্জন পাহাড়, পাহাড়ের শস্য, নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব জীবন প্রণালি যেন আলাদা একটা ভাব দ্যোতনা তৈরি করেছে। তৈরি করেছে নিজস্ব শব্দ, দর্শন রসসুধা। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে নেত্রকোনার অন্যতম কবি পূর্ণানন্দ গিরি পরমহংস। বৈষব ভাবাদর্শের সংস্কৃত ভাষার এ কবির জন্ম মদন উপজেলার কাইটাইল গ্রামে। তারপর নাম নিতে হয় কবি কঙ্ক, দ্বিজ কানাই (মহুয়া পালা), মনসুর বয়াতি (দেওয়ান ও মদিনা পালা), কমলসিংহ (পদ্মপুরাণ)-এর মতো লোক কবিদের নাম। দ্বিজেন্দ্রলাল সিংহ ও হেমন্তবালা দত্ত নেত্রকোনা অঞ্চলের শুরুর দিকের মহিলা কবি। মোহনগঞ্জ উপজেলার কবি ইব্রাহীম খাঁর কবিতা মুসলমান ঐতিহ্য ও সমাজ সচেতনতা সৃষ্টিতে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি নির্মলেন্দু গুণ ষাটের দশকে কবিতার জগতে প্রবেশ করেন। নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় লেখা ছাপার মাধ্যমে তার কবি জীবনের শুরু। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘মুজিব-লেনিন-ইন্দ্রিরা’, ‘না প্রেমিক না বিপ্লবী’, ‘চাষাভুষার কাব্য’, ‘শান্তির ডিক্রি’, ‘চিরকালের বাঁশি’, ‘পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ’, ‘আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি’ প্রভৃতি। তার কবিতা ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ এবং ‘হুলিয়া’ বাংলা কবিতার মাইলস্টোন। আটপাড়া উপজেলার কবি হেলাল হাফিজ একনামেই সারা বাংলাদেশেই সুপরিচিত। তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’, ‘বেদনাকে বলছি কেঁদো না’। সমকালীন কবিদের মধ্যে রয়েছে কবি আল-আজাদ, নূরুল হক, জুয়েল মাজহার, ইয়াসিনুর রহমান, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, সরোজ মোস্তফা, ফারুক আহমেদ, তাদের আবেগ ও সময়কে ধারণ করে নিজ নিজ জায়গায় স্বতন্ত্র ও অবিকল্প। কবিতার পাশাপাশি ছড়া সাহিত্যেও নেত্রকোনার অবদান অবহেলা করার মতো নয়। নেত্রকোনার ছড়াকার হিসাবে শ্যামলেন্দু পাল, মাহবুবা খান দীপান্বিতা, রইস মনরম, সঞ্জয় সরকার, মনিরুজ্জামান রাফি’র নাম না নিলেই নয়।
সাহিত্য-সংস্কৃতির পাশাপাশি নেত্রকোনার ছোটকাগজ বা সাহিত্য সাময়িকীর ইতিহাসও বেশ পুরোনো ও গৌরবের। সাহিত্য আন্দোলনের এ ধারাটি লোকসাহিত্যসমৃদ্ধ এ অঞ্চলকে যেন পূর্ণতা দান করেছে। যৌবনের অহংবোধ, দ্রোহ, আত্মপ্রকাশের তীব্র চাপে সৃষ্ট আত্মঘোষণা, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পূর্বজদের কাজের বাইরে এসে নতুন সাহিত্য আন্দোলন গড়ে তোলা- সবকিছুই যেন ঘটেছে নেত্রকোনার ছোটকাগজ বা সাহিত্য সাময়িকীর মাধ্যমে। ১৮৮৮ সালে মোহনগঞ্জে ‘উদ্দেশ্য মহৎ’, ১৯১৬ সালে সদর থেকে ‘প্রান্তবাসী’, ১৯২০ সালে মদনপুর থেকে ‘ভাস্বর’, ১৯২৪ সালে কেন্দুয়া থেকে ‘হাফেজ শক্তি’, ১৯৬১ সালে খালেকদাদ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকার পাশাপাশি সাহিত্য সাময়িকী ‘অগ্নিশিখা’, ‘আলোড়ন’, ‘কিংশুক’, ‘বিপ্লবী কণ্ঠ’, ‘চন্দ্রাকাশ’, ‘স্পন্দন’, ‘স্মরণী’, ‘শিল্প থেকে সাহিত্য’, ‘মাটির সুভাস’ প্রকাশিত হয়। বর্তমানে জানা-অজানা ছোটকাগজ ও সাহিত্য সাময়িকী নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে যা আরও অধিকতর অনুসন্ধান ও গবেষণার দাবি রাখে।
বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সাহিত্যিকদের বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী পদকসহ বিবিধ পুরস্কার অর্জন করেছেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল কাজী মাহবুব উল্লাহ পুরস্কার, শেলটেক পদক, মাইকেল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন। অধ্যাপক যতীন সরকার প্রবন্ধে সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নারায়ণগঞ্জ শ্রুতি স্বর্ণপদক, মনিরুদ্দিন ইউসুফ সাহিত্য অ্যাওয়াড সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ কবিতা রচনা করার জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেছেন। কবি হেলাল হাফিজ কাব্য গ্রন্থের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী পদক, আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেন। ওই সম্মানিতজন ছাড়াও অসংখ্য সাহিত্যিক বিবিধ পুরস্কারে ভূষিত হয়ে নেত্রকোনা অঞ্চলের সম্মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছেন।
একুশ শতকের যান্ত্রিক জগতে এসেও নেত্রকোনার সাহিত্য সংস্কৃতির সেই ভিন্নতর মুনশিয়ানা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলেই আমার আশাবাদ। এ অঞ্চলের সীমায়িত ভূগোল ও কোমল প্রকৃতি যেন সাহিত্যিকদের মধ্য দিয়ে পরম মমতায় বিকশিত হয়েছে। ফলে জ্যামিতির গণ্ডিতে এটাকে আটকে রাখা বেশ দুরুহ ব্যাপার। প্রাত্যহিক জীবন ও চর্চায় যে বোধ ও বোধিত্ব এ অঞ্চলে ক্রমাগত সৃষ্টি হচ্ছে তার ওজন মাপাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও নানামুখী বিবর্তনে এ অঞ্চলের সাহিত্য সংস্কৃতি পুরোপুরি ব্যর্থ না হয়ে সারা বাংলাদেশে কল্যাণকর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হোক-এ শুভকামনা রইল।