শতবাধা অতিক্রম করে আরও এগোতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

অনেক বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে চলার পথেও অনেক বাধা আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। শতবাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সামনে আরো এগোতে হবে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদের বিশেষ আলোচনায় ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সংসদ নেতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু ক্ষমতাকে ভোগ করার বস্তু হিসাবে নেইনি। ক্ষমতা মানে হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া। জনগণের জন্য কাজ ও ভাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ পাওয়া।

বিশেষ আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের ওপর বুধ ও বৃহস্পতিবার আলোচনা শেষে সংসদে তা সর্বসন্মক্রমে গ্রহণ করা হবে। এর আগে বুধবার বিকালে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদে স্মারক বক্তৃতা দেন।

বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনার কাঠামোটা করে রেখেছেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশকে কিভাবে দেখতে চাই সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে বাংলাদেশ ও আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন বেঁচে থাকতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই ব-দ্বীপটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য ডেল্টা প্লান-২১০০ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি।’

‘এই ব-দ্বীপ অঞ্চলে যারা বাসকরে তারা যেন সুন্দর জীবন পায়। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পায়। তাদের যেন আর কষ্ট করতে না হয়। বাংলাদেশকে আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞানসম্পন্ন দেশে উন্নীত করতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সেই প্রত্যাশা করি।’

সংসদ নেতা বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের রূপকল্প অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। পরিকল্পিতভাবে আমরা সমস্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারছি বলে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণ ভোট দিয়েছে বলে আমরা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে পারছি। রজতজয়ন্তী উদযাপনের সময়ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো।’

বারবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোর জন্য দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। করোনা ভাইরাসের মতো মহামারী মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

‘ইতোমধ্যে ৯ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় চারকোটির মতো পেয়েছে দ্বিতীয় ডোজ। আর বাকি ১ ডোজ করে। কিন্তু টিকার কোনও অভাব হবে না। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে, যেভাবে পারি খরচ করছি। প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছি।’

উন্নত দেশগুলোতে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট হয় না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আবার একই টিকাও দেয় না। আমরা কিন্তু বিনা পয়সা করোনা পরীক্ষা করাচ্ছি ও টিকা দিয়ে যাচ্ছি। সমাজের সব স্তরের মানুষ এই টিকা পাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে আমরা ঠিক করেছি ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিবো।’

করোনার সময় খাদ্যের ঘাটতি মোকাবেলায় কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের দারিদ্রের হার ৩০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনা মহামারী না থাকলে ১৭ ভাগে নামিয়ে আনতে পারতাম। যেটার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছিলাম। করোনার কারণে কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তারপরও উন্নয়নের চাকা কিন্তু থেমে যায়নি।’

দেশের প্রবৃদ্ধি আটভাগে উন্নতি হয়েছিলো জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী আজকে অর্থনৈতিক মন্দা। বিশ্বব্যাপী যেখানে সমস্যা। সেখানে আমরা এককভাবে কতটুকু করবো।’

‘তারপরেও আমি বলতে পারি দক্ষিণ এশিয়ায় সবথেকে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। ১১টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমরা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবথেকে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ। পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছি বলেই তা সম্ভব হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার ফসল হচ্ছে এই সংসদ। জাতির পিতা যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে নির্বাচন ও আজকের সংসদ।’

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করার জন্য ভারতসহ বন্ধুপ্রতীম সব দেশ ও সমর্থনকারী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

Share this post

scroll to top