তিনি বংশীবাদক হিসেবেই সংগীতের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। সবার কাছে গায়ক বারী সিদ্দিকী হিসেবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে। ওই বছর হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে তিনি ছয়টি গান গেয়ে রাতারাতি আলোচনায় আসেন।
সেই গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’। এরপর বাঁশিওয়ালা বারী সিদ্দিকী হয়ে উঠেন সবার প্রিয় গায়ক।
নেত্রকোনার কৃতি সন্তান দরদী কণ্ঠের গায়ক ও বাঁশির জাদুকর বারী সিদ্দিকী বেঁচে থাকলে এবার ৬৭ বছরে পা রাখতেন।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোনায় এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বারী সিদ্দিকী। তার পারিবারিক নাম আবদুল বারী সিদ্দিকী। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি তার। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।
ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারী সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসংগীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সঙ্গে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।
নব্বইয়ের দশকে কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বারী সিদ্দিকীর পরিচয়। সেই পরিচয় তার ভাগ্য বদলে দিয়েছিলো। তিনি নিজেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলে গেছেন, হুমায়ূন আহমেদের নাটক-সিনেমার গান তার নামকে সারাদেশে জনপ্রিয় করে তুলেছিলো। হুমায়ূন আহমেদ তার গান গাওয়ার পেছনে অনেক বড় উৎসাহদাতা।
১৯৯৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন বারী সিদ্দিকী। এরপর ১৯৯৯ সালে সেই ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে গান করা।
বারী সিদ্দিকীর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘শুয়া চান পাখি আমার’, ‘পূবালি বাতাসে’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’, ‘রজনী হইস না অবসান’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘ঘরেও জ্বালা বাইরেও জ্বালা’, ‘অপরাধী হইলেও আমি তোর’, ‘বড়বেশি মন্দ আমি’, ‘মনের দুঃখ মনেই রইলো’ ইত্যাদি।
২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর বারী সিদ্দিকী না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাকে নেত্রকোনা সদরের কারলি গ্রামে তারই তৈরি বাউল বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।