নিখোঁজের দশ বছর পর ভারত থেকে ময়মনসিংহে ফিরলেন আলপনা খাতুন।
জানা যায়, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চরকালি বাজাইল গ্রামের আলপনা খাতুন দশ বছর আগে হারিয়ে যান। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার পর তার আর কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছিলনা। অনেক খোঁজাখুজির পরও আলপনার খবর না পেয়ে একেবারে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা হঠাত একদিন জানতে পারেন আলপনা ভারতের আগরতলায় আছেন। তাও মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায়। এরপরই ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় তাকে বাংলাদেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলে।
অবশেষে আলপনা খাতুনসহ এরকম মানসিক ভান্সািউম্যহীন ৬জন বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তারা বাংলাদেশে আসেন। বাকি ৫জন হলেন বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম, জামালপুর জেলা সদরের নারিকেলি গ্রামের মানিক মিয়া, ঢাকার কেরানীগঞ্জের রিনা আক্তার, কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের ভাস্কর টিলা গ্রামের হানিফা আক্তার ও বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার জিয়ারুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় আখাউড়া স্থলবন্দরের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে তাদের ভারত থেকে পাঠানোর সময় ভারতের ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী কমিশনার কার্যালয়ের হাই কমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, প্রথম সচিব মো. রেজাউল হক, প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান এস এম আসাদুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। আখাউড়ায় উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান, আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম, আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান, ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ মো. আব্দুল হামিদ, স্বেচ্ছাসেবক সৈয়দ খায়রুল আলম ও ভারত থেকে ফেরা ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।
একাধিক নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, ফেরত আসা ছয় বাংলাদেশিই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন সময় ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে আগরতলার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাদের। তাদের অনেকেই এ হাসপাতালে চার থেকে পাঁচ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাদের দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ হাসপাতালে পাচারের শিকার আরো অনেক বাংলাদেশি আছেন বলে জানা গেছে।
আলপনার চাচাত ভাই দুলাল বলেন, ১০ বছর আগে হঠাৎ করে একদিন আমাদের বোন নিখোঁজ হন। অনেক পরে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি যে আগরতলায় মানসিক হাসপাতালে আছেন তিনি। কিন্তু কীভাবে তিনি ওই দেশে যান, তা আমরা বুঝতে পারছি না।
উদ্ধারকৃত একজন জিয়ারুল। তার আত্মীয় মোহাম্মদ রাজ্জাক বলেন, ২০১৪ সালে আমার স্ত্রীর বোনের স্বামী জিয়ারুল নিখোঁজ হয়ে যান। তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। এমন একজন মানুষ কীভাবে ভারতে পাচার হলেন, সেটা নিয়ে আমরা বিস্মিত।
হানিফা আক্তারর ছেলে ইয়াছিন বলেন, পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করে মা হারিয়ে যান। ভেবেছিলাম কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন। পরে নানাবাড়ি করিমগঞ্জ থানায় খোঁজ করা হয়। কিন্তু পাওয়া যায়নি। পরে মে মাসে পুলিশ খোঁজ নিতে বাড়িতে এলে জানতে পারি যে আগরতলায় আছেন মা।
কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. তাহের আলী বলেন, একটি আনন্দের ঘটনার সাক্ষী হতে এসেছি। বছর দু’য়েক আগে খবর পাই রীনা আক্তার ভারতে আছেন। এরপর সরকারি উদ্যোগে তাদের দেশে আনা হয়।
পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে পাচারের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারবর্গকে জরুরি অর্থ সহায়তা এবং কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয় বলে জানান ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি বলেন, তারা পাচারের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু তারা কীভাবে সেখানে গিয়েছিলেন, সেটি চিন্তার বিষয়।