বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেছেন, পোল্ট্রি বা ডেইরী ফার্মে কালো সৈনিক পোকার লার্ভি চাষ করে কম খরচে মাছ এবং হাঁস-মুরগির ভেজাল মুক্ত খাবার উৎপাদন সম্ভব।
বর্জ্য পরিশোধনের সাথে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবারের যোগান দিবে প্রোটিন সমৃদ্ধ এই জীবন্ত খাদ্য ‘কালো সৈনিক পোকা’। এই পোকা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনেও ব্যাপক ভ‚মিকা রাখতে পারে।
তিনি আরো বলেন, সিটি শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এই কালো সৈনিক পোকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মাছের খাদ্যের পাশাপাশি মুরগি, হাঁস ও অন্যান্য গৃহপালিত পশু-পাখির বিকল্প খাদ্য হিসেবে স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও সুলভ মূল্যের হতে পারে এই পোকার লার্ভা। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ রোধে এটি পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে।
শনিবার সকালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের হল রুমে ‘মৎস্য খাদ্যের বিকল্প হিসেবে কালো সৈনিক পোকার চাষ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সেমিনারে বাউরেসের পরিচালক প্রফেসর আবু হাদী নূর আলী খান, প্রফেসর ড. আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আলী, প্রফেসর ড. তানভীন রহমান, ড. ফাতেমা হক শিখা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারিতে আয়োজিত ‘মৎস্য খাদ্যের বিকল্প হিসাবে কালো সৈনিক পোকার চাষ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জানান, ‘কালো সৈনিক পোকা’ বা ‘বøাক সোলর্জাস ফ্লাই’ এর লার্ভি বিভিন্ন বর্জ্য ভক্ষণ করে বেড়ে ওঠে। হাঁস-মুরগি ও মাছের বিকল্প খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হবে এই লার্ভি। পোকা, বর্জ্য ও মাছ এই তিনটির সমন্বয় করে গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন।
তিনি আরো জানান, কালো সৈনিক পোকা পরিবেশ বান্ধব এবং কৃষকের বন্ধু। ময়লা-আবর্জনা, পচনশীল ফলমূল, শাক সবজি, হাঁস মুরগির বিষ্ঠা এবং গৃহপালিত প্রাণীর মল ভক্ষণ করে কালো সৈনিক পোকার লার্ভি। এই পোকা জৈব আবর্জনার ৭১.৫ শতাংশ পর্যন্ত ভক্ষণ করে হজম করে থাকে। বর্জ্যর অবশিষ্ট অংশ বায়োডিজেল, প্রোটিন এবং কম্পোস্ট সারে রূপান্তরিত হয়। শুষ্ক অবস্থায় এই পোকার লার্ভা থেকে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আমিষ, ৩০ থেকে ৩৬ শতাংশ স্নেহ এবং ২০ থেকে ২২ শতাংশ শর্করা পাওয়া গেছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম এই পোকার লার্ভাতে রয়েছে। গবেষণা চলাকালীন আহরিত লার্ভা থেকে মাছের খাদ্য প্রস্তুত করে তেলাপিয়া মাছের উপর গবেষণা করে বাজারে প্রাপ্ত বাণিজ্যিক খাদ্যের চেয়ে অনেক ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে।
সেমিনারে আরো বলা হয়, আমাদের চাষীরা কালো সৈনিক পোকা’র চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে কম খরচে মাছ এবং হাঁস-মুরগির খাদ্যের অনেকটাই যোগান দিতে পারে। ফলে তাদের আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাড়ির বর্জ্য পরিশোধন করে তারা গুণগত মানের সারও পেতে পারে। পোল্ট্রি বা ডেইরী ফার্মে কালো সৈনিক পোকার লার্ভা চাষ করে একদিকে প্রোটিন সমৃদ্ধ জীবন্ত খাদ্য পাওয়া যায়, অপরদিকে ফার্মের বর্জ্য পরিশোধন করাও সম্ভব। চায়না, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার মত উন্নত দেশ সমূহে ক্যাটফিস, তেলাপিয়া ও হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে কালো সৈনিক পোকার লার্ভা ব্যবহার করে আশানুরূপ ফল পেয়েছে। আমাদের দেশের জলবায়ু কালো সৈনিক পোকার জন্য উপযোগী হওয়ায় এর ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব। ফলে এর চাষের মাধ্যমে আমরাও কম খরচে মাছ এবং হাঁস-মুরগির ভেজাল মুক্ত খাবার উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।
পোকাটির লার্ভা বাজারজাতকরণ সম্পর্কে গবেষক জানান, কালো সৈনিক পোকার লার্ভা মাছচাষীদের মাঝে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পোকাটির লার্ভা কেজি প্রতি ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে এটি ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এখনও শুরু হয়নি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বানিজ্যিক কোম্পানীগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান করেন তিনি। ##