বগুড়ায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জের কোটিপতি তরুন ব্যবসায়ী সৈয়দ আপেল মাহমুদকে (২৯) অপহরণের পর নির্মমভাবে খুনের ঘটনার সাথে সিটি ব্যাংক গোবিন্দগঞ্জ শাখার ম্যানেজার আবু রায়হান মো: জিন্নাতুল ইসলাম জড়িত বলে জানিয়েছেন ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাহালু থানার এসআই ডেভিড হিমাদ্রী বর্মা।
তিনি জানান, তদন্ত শেষ হয়েছে এবং মামলার সকল তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তা রায়হানকে গ্রেফতারের পর হত্যাকান্ডের ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।
তবে গত এক মাসেও হত্যার রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার। তারা দ্রুত রহস্য উন্মোচন করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
গত ১০ জানুয়ারি রাতে ব্যবসায়ী আপেল মাহমুদ বগুড়া সদরে নিখোঁজ হন এবং পরদিন তার লাশ উদ্ধার হয় কাহালু উপজেলার ছাতার পুকুর এলাকা থেকে। তিনি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মোগলটুলি গ্রামের সৈয়দ আব্দুল ওহাব ওরফে ডিপটি মিয়ার পুত্র। আপেল পেশায় ছিলেন একজন আমদানি-রফতানিকারক।
নিহত ব্যবসায়ী আপেলের চাচা সৈয়দ আব্দুল করিম রোববার বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘটনার দিন গত ১০ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে সিটি ব্যাংক গোবিন্দগঞ্জ শাখার ম্যানেজার আবু রায়হানের নিকট ব্যবসায়ীক কাজে যান আপেল। সেখান থেকে তিনি সন্ধ্যায় বগুড়া সদরের ঠেঙ্গামারাস্থ টিএমএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মা আয়েশা বেগমকে দেখতে যান। রাত ৮টার পর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আপেল ফোনে কথা বলতে বলতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছেন। পরদিন সকাল সাড়ে ৯টায় জানা গেছে আপেলকে কে বা কারা শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার কালাই ইউনিয়নের ছাতার পুকুর এলাকার জমিতে লাশ ফেলে রেখেছে।
এ ঘটনায় চাচা করিম বাদী হয়ে কাহালু থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ এক মাসেও হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তাই দ্রুত হত্যার রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের বিচার দাবী চেয়েছে পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহতের বাবা সৈয়দ আব্দুল ওহাব ওরফে ডিপটি মিয়া, ছোট বোন স্কুল শিক্ষক ডলি খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা।
বোন ডলি খাতুন বলেন, ভাই আপেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে ওইদিনই চিকিৎসাধীন মা আয়েশা খাতনু (৪৫) মারা গেছেন। একইসাথে তাদের দুজনকে দাফন করা হয়েছে। আপেলের স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা এবং গর্ভবতী। পেটের শিশুটি বাবাকে দেখতে পেল না। বাবা ডিপটি মিয়া একজন ব্যবসায়ী ও কৃষক।
চাচা আব্দুল করিম বলেন, আমরা শুনেছি সিটি ব্যাংক গোবিন্দগঞ্জ শাখার ম্যানেজার আবু রায়হান আপেলকে নতুন বিনিয়োগ নেয়ার জন্য ২ কোটি টাকা অ্যাডজাস্ট করতে বলেছিলেন। সে হিসেবে ম্যানেজারকে ওই দিন ৯১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। তবে বিষয়টি আমরা ব্যাংক থেকে সরাসরি জানতে পারিনি। তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি ছিল ম্যানেজার রায়হানের শেষ কর্মদিবস। এর আগে তিনি অন্যত্র বদলী হন। তাকে ওই দিন আপেল বিদায় সম্বর্ধনা জানান। এরপর থেকে রায়হান বদলীস্থলে যোগ না দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে প্রমাণ হয় হত্যার পেছনে তিনি জড়িত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাহালু থানার এস আই ডেভিড হিমাদ্রী বর্মার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হয়েছে এবং সকল তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ হত্যার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সিটি ব্যাংক ম্যনেজার আবু রায়হান। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। আশাকরি তাকে শিগগিরই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আপেলের নিকট থেকে হাতিয়ে নেয়া ৯১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাই প্রধান আসামি গ্রেফতারের পর সবকিছু জানানো হবে। নিহতের পরিবারকে এ জন্য ধৈর্য্য ধরতে হবে।