সরকারি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে কাশ্মিরি যুবক ফয়সল

কাশ্মিরিদের জীবনেরও মূল্য আছে টুইটবার্তায় একথা লিখে ৯ জানুয়ারি সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন ভারতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় (আইএএস) শীর্ষস্থান পাওয়া কাশ্মিরি যুবক শাহ ফয়সাল। সরকারি আমলা হয়ে সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করার ফল ফয়সালের জন্য ভালো হয়নি। এখন তিনি কাশ্মিরে র‌্যালি করেছেন এবং শান্তির জন্য চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সোমবার ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের উত্তরাঞ্চলীয় জেলার কুপওয়ারায় শাহ ফয়সালের কথা শোনার জন্য মানুষ তুষারপাতকে উপেক্ষা করে জড়ো হয়েছিল। মূলধারার রাজনীতিবিদদের সমাবেশের চেয়েও বড় বেশি ভিড় হয়েছিল এ র‌্যালিতে।

তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমি একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অনেক অন্যায়ের সাক্ষী হয়ে রয়েছি, এই বছরগুলোতে আমার হৃদয় আগুনে পুড়ছিল। অন্যায় দেখে বেশির ভাগ সময় অসহায় বোধ করতাম। আমি সেই সময় কথা বলতে পারিনি এবং কাশ্মিরের জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ খুঁজছিলাম’।

অপহরণকৃত কাশ্মিরিদের হত্যা, নয়া দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে কাশ্মিরিদের তথা মুসলিমদের কোণঠাসা হওয়ার সমালোচনা করে কয়েক সপ্তাহ আগে ফয়সাল ভারতের সিভিল সার্ভিসের চাকরি ছেড়ে দেন। ২০১০ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে আইএএস পরীক্ষায় কাশ্মিরের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন ফয়সাল। কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনের কারণে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ভূস্বর্গের অন্যান্য তরুণ প্রজন্মের প্রতীক ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

তাকে রোল মডেল বানানোর অভিপ্রায় ছিল ভারতের। ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অনেক তরুণকে আকৃষ্টকারী শহীদ স্বাধীনতাকামী কমান্ডার বুরহান ওয়ানি। ওয়ানির সাথে অনেক পার্থক্য রয়েছে ফয়সলের। তারপরও ফয়সল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সরকারি সাবেক এই আমলার রাজনীতিতে নতুন ইনিংস শুরু করা ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আলোচিত ঘটনা হয়ে উঠেছে।

ধর্ষণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। তার রাজনীতিতে যোগ দেয়ার খবর প্রকাশ্যে এনেছেন ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। সোস্যাল মিডিয়ায় ফয়সালের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘আমলা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রাজনীতিতে আসার সুযোগ হলো।’ সবকিছু ঠিকঠাক চললে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্সের হয়ে ভোটের লড়াইও করতে পারেন ফয়সাল।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। টুইটারে লেখেন, ‘জনসংখ্যা, পিতৃতন্ত্র, অশিক্ষা, মদ, পর্নোগ্রাফি, প্রযুক্তি ও অরাজকতার ফলে দেশ রেপিস্তান হয়ে গেছে।’ আরেক পোস্টে লিখেন, ‘কাশ্মিরিদের হত্যা থামাতে সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের বিশেষ মর্যাদার ওপরেও আঘাত হানার চেষ্টা হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীদের চাপে দেশের ২০ কোটি মুসলিম কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে।’

ফয়সাল ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ধারাকে ভারত ও ওই রাজ্যের মধ্যে ‘বিয়ের দলিল’-এর সাথে তুলনা করেন।

এসব কথাবার্তার কারণে তার বিরুদ্ধে সার্ভিস রুল ভাঙার অভিযোগ আনা হয় এবং বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। মোদি সরকারের সমালোচনায় ফয়সাল বলেন, ‘রিজার্ভ ব্যাংক, সিবিআই, এনআইএর মতো প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ এ দেশের সাংবিধানিক কাঠামোকে নষ্ট করে দিতে পারে। আমি ফের জানাতে চাই, দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে বেশি দিন চুপ করিয়ে রাখা যাবে না।’

তবে কাশ্মিরিদের হত্যার প্রতিবাদে চাকরি ছাড়লেও ফয়সল বলেছেন, তিনি স্বাধীনতার জন্য যারা যুদ্ধ করছেন তাদের সাথে যোগদান করবেন না।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top