ময়মনসিংহসহ এবার দেশে শীত একটু আগেভাগেই আসবে বলে নিশ্চিত করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাধারণত নভেম্বরে স্বাভাবিক শীত এবং ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তীব্র শীত থাকলেও এবার নভেম্বরেই তীব্র শীত পড়তে পারে। তবে নিম্নচাপ নিয়ে একটু অস্পষ্টতা রয়েছে। একজন আবহাওয়াবিদ ডিসেম্বরের শুরুতে নিম্নচাপের কথা বললেও অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে নভেম্বরেই দুটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন।
শীত এবার আগেভাগেই নামবে, বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর :
আবহাওয়ার অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে এবার আগেভাগেই শীত নামবে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হিসেবে ধরা হলেও এই বছর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আস্তে আস্তে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘দেশের উত্তর-পশ্চিমে একটা উচ্চ চাপ বলয় বিরাজমান করছে এখন। এই উচ্চ চাপ বলয় বঙ্গপোসাগরের জলীয় বাষ্পকে দক্ষিণের দিকে ঠেলে দেবে। ফলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকবে। সেই তাপমাত্রাটা গড়ে ১৮ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করবে অঞ্চলভেদে। সেই হিসেবে নভেম্বরে এই তাপমাত্রা থাকবে। যেটা শীতকালে সাধারণত গড় তাপমাত্রা থাকে।
তবে প্রথম শৈত্যপ্রবাহটি ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই হবে বলে জানাচ্ছেন আবুল কালাম মল্লিক। এটি হবে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা কমে গেছে। তীব্র এবং মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সময়সীমাটাও কমে আসছে।
তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ যেগুলো হচ্ছে, সেটি দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেন এই আবহাওয়াবিদ। এসব শৈত্যপ্রবাহ দশ দিন থেকে শুরু করে একুশ দিন পর্যন্ত থাকছে। আবহাওয়ার অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, নেত্রকোনা, যশোর, কুষ্টিয়া কখনো কখনো রাঙ্গামাটি অঞ্চলে এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হবে এবার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ক্যাটাগরিতে শৈত্যপ্রবাহ ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বিবেচনা করা হয়।
সর্বশেষ বুলেটিনে নভেম্বরে ২ নিম্নচাপ, ১ ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস
নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। নভেম্বর মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তবে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত সভা থেকে নভেম্বর মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
সভায় অক্টোবর মাসের আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত পর্যালোচিত হয়। এতে দেখা যায় অক্টোবর মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হলেও নভেম্বর মাসে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হতে পারে।
নভেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে- এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমবে। গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা বা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
এছাড়া দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকতে পারে।
অক্টোবর মাসে সার্বিকভাবে বাংলাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি (২৮%) বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ৩-৪ এবং ১৭-২০ অক্টোবর সময়ে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়। এ সময় এ মাসের দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ২৪৬ মি.মি. সৈয়দপুরে (০৩ অক্টোবর) রেকর্ড করা হয়।
নভেম্বর মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হতে পারে চট্টগ্রামে (৫৫-৭০ মি.মি.)। আর সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে রংপুর বিভাগে (৮-১২ মি.মি.)।