স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

খুলনায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী রফিক শেখকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। রবিবার (৩১ অক্টোবর) খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি আসামিকে অন্য একটি ধারায় সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জ‌রিমানা অনাদায়ে আরও এক বছ‌রের কারাদণ্ড দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত র‌ফিক রূপসা উপজেলার নেহালপুর গ্রামের মৃত আবেদ শেখের ছেলে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে আসামি রফিক শেখের সঙ্গে ফকিরহাট উপজেলার হালিমা বেগমের ছোট মেয়ে মরিয়মের বিয়ে হয় ২০১৭ সালে। বিয়ের পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মরিয়মের ফোনে কথা বলা নিয়ে সন্দেহ করতেন রফিক। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ বিবাদ লেগেই থাকতো। এক পর্যায়ে তারা উভয় নেহালপুর থেকে ফকিরহাট উপজেলার খাজুরা এলাকায় রকি শেখের ভাড়া বাড়িতে এসে ওঠে। সেখানেও মরিয়মের ওপর একই ঘটনায় নির্মম অত্যাচার করার অভিযোগ পাওয়া যায়। রফিক শেখ কবুতর পালন ও মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালা‌তো। ২০২০ সালের ১২ আগস্ট দুপুর ১২টায় বাড়ি এসে রফিক তার স্ত্রীকে না পেয়ে সন্দেহ বাড়ে। বাইরে থাকার কারণ জানতে চায় সে। উত্তর দিতে না পারায় স্ত্রীকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করেন রফিক।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ওইদিন সকালে রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের দীপক দাসের পানের বরজে পেট্রল ও একটি বস্তার মধ্যে কয়েকটি ইট রেখে আসেন রফিক। রাতে বেড়ানোর কথা বলে রফিক স্ত্রীকে নিয়ে রূপসা ব্রিজসহ বিভিন্ন জায়াগায় যান। রাত ১০টায় স্ত্রীকে পানের বরজের সামনে নিয়ে ইট দিয়ে আঘাতে করেন রফিক। এক পর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিমের শরীরে বস্তা পেচিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আসামি রফিক শেখ বাড়ি ফিরে মরিয়মের মাকে প্রতিবেশী রঞ্জন বৈরাগীর মাধ্যমে জানায়, মরিয়মকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মরিয়মের মা সম্ভাব্য আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ নিতে থাকেন। এর দু’দিন পর তার অর্ধগলিত ও পোড়া লাশ পাওয়া যায় রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামে দীপকের পানের বরজের মধ্যে। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মর্গে গিয়ে মেয়েকে শনাক্ত করেন মরিয়মের মা। এ বিষয়ে তিনি রূপসা থানায় বাদী হয়ে রফিক শেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. শাহাবুদ্দিন গাজী রফিক শেখকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

Share this post

scroll to top