৪৫ বছর বয়সী মিনা (ছদ্মনাম) ভারতের ব্যাঙ্গালোর শহরে গৃহকর্মী। তিনটি বাসায় কাজ করে প্রতিমাসে ৬০০০ রুপি আয় করেন তিনি।
তবে তার আয় একসময় এখনকার তুলনায় তিনগুণ ছিল। কিন্তু কয়েকটি বাসায় তিনি কাজ হারিয়েছেন। কারণ, গৃহকর্তার বিরুদ্ধে যে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন।
মিনা বলেন, তিনি একসময় ৭০ বছর বয়সী এক দম্পতির বাসায় কাজ করতেন। বড় মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য তাদের কাছ থেকে তিনি ১০০০০ রুপি ধার নিয়েছিলেন। ততদিনে মিনা সে বাসায় তিন বছর কাজ করেছে।
মিনা অভিযোগ করেন, তিনি যখন ঘর পরিষ্কার করতেন তখন গৃহকর্তা এসে তার শরীর ঘেঁষে যেত। কখনো-কখনো মিনার কাপড় ধরে টান দিতেন গৃহকর্তা।
কিন্তু স্বামীর অসংলগ্ন আচরণ সম্পর্কে তাঁর স্ত্রী কিছুই জানতেন না বা দেখতেন না। তিনি বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে থাকতেন।
গৃহকর্তা যেন আর অগ্রসর হতে না পারেন সেজন্য মিনা প্রতিহত করার চেষ্টা করতেন।
এক সন্ধ্যায় গৃহকর্তার স্ত্রী বেডরুমের দরজা করে ঘুমিয়ে পড়েন। মিনা অভিযোগ করেন, সে সময় গৃহকর্তা তাকে জাপটে ধরে সোফার উপর টেনে আনার চেষ্টা করে। গৃহকর্তার বয়সের তুলনায় শারীরিক শক্তি ভালোই ছিল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে সে ব্যক্তির চেয়ে মিনার শরীরের জোর বেশি ছিল।
তাকে ধাক্কা দিয়ে মিনা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এরপর সে বাড়িতে আর যাননি মিনা। কিন্তু তিনি পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করেননি। তাঁর ধারণা এ অভিযোগ কেউ বিশ্বাস করবে না। এরপর থেকে সে দম্পতি মিনাকে চাপ দিতে থাকে যাতে সে ধার করা অর্থ ফেরত দেয়।
প্রথমে তারা প্রথমে টেলিফোনে হুমকি দেয়। এরপর মিনাকে ভয় দেখানোর জন্য তার বাসায় এক ব্যক্তিকে পাঠানো হয়। গৃহকর্তার স্ত্রী উল্টো মিনাকে দোষারোপ করতে থাকে।
তিনি বলেন, মিনার পোশাক তার স্বামীকে প্রলুব্ধ করেছে। এরপর মিনা ভীত এবং বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। তিনি ঋণও শোধ করতে পারছেন না আবার তিনি বাড়িতে কাজেও ফিরে যেতে পারছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে মিনা অন্য যে বাড়িতে কাজ করতেন, তিনি বাড়ির লোকদের কাছে তাঁর দুঃসহ যন্ত্রণার বিষয়টি তুলে ধরেন। সে বাড়ির একজন মিনাকে গৃহকর্মীদের একটি সংগঠনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
তখন সে সংগঠনের তরফ থেকে বৃদ্ধ দম্পতির সাথে যোগাযোগ করা হয়। বলা হয়, তারা যদি মিনাকে হয়রানি বন্ধ না করে, তাহলে পুলিশের সাহায্য নেয়া হবে।
মিনার হাতে কিছু জমানো অর্থ ছিল। সে অর্থ দিয়ে তাদের কাছ থেকে নেয়া ঋণ যতটুকু সম্ভব হয়েছে ততটুকু শোধ করেছেন মিনা।
ভারতে কর্মজীবী নারীদের ৯৪ শতাংশ মিনার মতো গৃহকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক কিংবা রাস্তার পাশে ক্ষুদে বিক্রেতা। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফাম ভারতের আটটি শহরে কর্মজীবী নারীদের উপর একটি জরিপ করে। সে জরিপে দেখা যায়, কর্মজীবী নারীদের ১৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার।
এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে নারী শ্রমিকরা। তাদের ২৯ শতাংশ এবং গৃহকর্মীদের ২৩ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার।
সূত্র : বিবিসি