বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার নামে টানা হেঁচড়া করে নির্যাতন করা হচ্ছে। রোববার নয়া পল্টনে সংবাদ সম্মেলেনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো মিথ্যা মামলায় এক বছর পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ বছর। তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ। একা চলতে পারেন না। আদালতে বা হাসপাতালে আনতে গেলে হুইল চেয়ারই ভরসা। তারপরও টেনে হিঁচড়ে জবরদস্তি করে আনা হচ্ছে কোর্টে।
বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে আলো-বাতাসহীন ছোট্ট একটি রুমে এনে এক ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। তার অসুস্থতা দিনে দিনে বাড়লেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না।
পুরনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা, পা ফুলে গেছে। নির্যাতন সহ্য করতে গিয়ে তার পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালের সুবিধা ও ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকেও বঞ্চিত করেছে সরকার।
তার এরকম শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও অমানবিকভাবে কারাগারের ভিতরে স্থাপিত ছোট্ট অপরিসর কক্ষের আদালতে ঘন ঘন হাজির করা হচ্ছে। মূলত, বেগম জিয়াকে আদালতে হাজির করার নামে টানা হেঁচড়া করে নির্যাতন করা হচ্ছে। চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকলেও যথাপযুক্ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করছে সরকার তাকে।
আইনজীবীরা বলছেন, কারামুক্ত হতে খালেদা জিয়াকে চারটি মামলায় জামিন পেতে হবে।
এসকল রাজনৈতিক মামলায় জামিন পেতে আদালত নয়, নির্ভর করছে সরকার প্রধানের মর্জির ওপর।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দুই কোটি টাকার সাজানো মিথ্যা মামলায়, যার সাথে বেগম খালেদা জিয়ার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই, তাকে জেলখানা নামের ইঁদুর-তেলাপোকা ও পোকা মাকড়ে উপদ্রুত স্যাঁতসেতে অন্ধকার ঘরে আর আটকে রাখবেন না। ঐ দুই কোটি টাকাতো সরকারের ছিল না। ছিল ব্যক্তিগত ট্রাস্টের। সেই দুই কোটি টাকা ব্যাংকে জমা আছে। তা এখন তিনগুণ বেড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বেগম জিয়ার সংশ্লিষ্টতাহীন দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার নজীর নেই, যেখানে ন্যূনতম আইনের শাসন আছে। প্রধানমন্ত্রী, আপনি অনুগ্রহ করে ফেরাউন-নমরূদ-হিটলার অথবা কল্পরাজ্যের হিরকের রাজাকে টেক্কা দেয়ার প্রতিযোগিতা করবেন না। জালিম এসমস্ত শাসকরা আজও মানুষের মধ্যে ধিকৃত। দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় এক বছর তো কারারুদ্ধ করে রাখা অন্যায়, অবিচার ও জুলুম। মিথ্যা দণ্ড দিয়ে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখেছেন, এবার মুক্তি দিন।,
প্রধানমন্ত্রী, আপনি দেয়ালের ভাষা পড়ুন। চারদিকের মানুষ চোখে মুখে কি বলছে বোঝার চেষ্টা করুন। পৃথিবীটা ক্ষণিকের। কিন্তু কর্মফল অনন্তকালের। এখনো সময় আছে। এক বছরে বহু নির্যাতন বহু কষ্ট দিয়েছেন বেগম জিয়াকে। চিকিৎসার সুযোগটুকুও দেননি। এবার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।
কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কেউ যখন শোনে দুই কোটি টাকার সাজানো মিথ্যা মামলার অজুহাতে বাংলাদেশের জনপ্রিয় এক নেত্রীকে কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে তখন তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। অনেকে এটাকে স্রেফ ক্ষমতার হিতাহিত জ্ঞানহীন নির্মম রসিকতা মনে করে।
হলমার্ক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বিচার না করে দুই কোটি টাকার তথাকথিত প্রমাণহীন ও সংশ্লিষ্টতাহীন দুর্নীতির বিচারে দশ বছর সাজা দেয়া হলো। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যাতে কেউ মামলা করতে না পারেন সেজন্য জাতীয় সংসদে ইনডিমনেটি বিল পাস করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নের নামে মেগা মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ এবং দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি কি দুর্নীতি নয়? খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডে যে মন্ত্রীরা উৎফুল্ল তারা আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখেন কখনো? যারা লাখো কোটি টাকা পাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, উল্টো তারাই জাতির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা সেজেছেন।
বাংলাদেশের সকলেই জানেন, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া ছাড়াও শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলাগুলো সচল রাখা হয়েছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক এগারোর সরকার ১৫টি মামলা করেছে। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তখন তার মাথার উপর ১৫টি দুর্নীতির মামলা ছিল। কিন্তু সেগুলোকে আদালতের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আর বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের মামলাগুলোকে চলমান রেখে এখন সাজা দেয়া হচ্ছে আইন আদালতকে কব্জা করে। মূল উদ্দেশ্য তাদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সারাদেশে বিএনপির বন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বাধা প্রদান করে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফরোজা খানম নাসরিনকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
নারায়ণগঞ্জের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয়। এছাড়া চট্টগ্রামের কর্মসূচিতে নসিমন ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে পুলিশ বাধা প্রদান করে। হবিগঞ্জ ও জয়পুরহাটে প্রতিবাদ মিছিল বের হলে পুলিশ ব্যাপকভাবে বাধা দিয়ে তা পণ্ড করে দেয়। তবে পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।