সাবেক ইউপি সদস্যকে ওসি প্রদীপের আইনজীবীর জেরা

চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকার্যের চতুর্থ দফায় আজ বুধবারও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছ।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

মামলার ১৬তম সাক্ষী হিসেবে সাবেক টেকনাফ সদর ইউনিয়ন মেম্বার হাম জালালকে জেরা করছেন ওসি প্রদীপের আইনজীবী। জেরা চলবে বিকাল পর্যন্ত।

এর আগে মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলায় চতুর্থ দফায় তিনজন যথাক্রমে ১৫, ১৬ এবং ১৭তম সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন- গৃহবধূ ছেনুয়ারা বেগম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য হাম জালাল ও আলী আকবর।

সাক্ষী ছেনুয়ারা বেগমের বরাত দিয়ে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা জানিয়েছেন, গৃহবধূ ছেনুয়ারা বেগমের স্বামী আবদুল জলিল ছিলেন পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। তাকে চট্টগ্রাম থেকে আসার পথে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রদীপ বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এরপরে তাকে বিভিন্ন গোপন স্থানে ৬ মাস আটকে রাখে প্রদীপ ও তার লোকজন।

এরপর ২০২০ সালের জুলাই মাসের শুরুতে ছেনুয়ারার বাড়ি যায় ওসি প্রদীপ। ৫ লাখ টাকা দিলে স্বামী আবদুল জলিলকে ছেড়ে দেওয়া হবে ছেনুয়ারাকে বলে জানান ওসি প্রদীপ। স্বামীকে বাঁচাতে ওসি প্রদীপের হাতে ৫ লাখ টাকা তুলে দেন ছেনুয়ারা বেগম। এরপর স্বামীকে ছাড়াতে টেকনাফ থানায় গেলে ওসি প্রদীপ ঠিক সময় মতো তিনি বাড়ী পৌঁছে যাবেন জানিয়ে ছেনুযারাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এর কয়েকদিন পর এক সাংবাদিক ছেনুয়ারা বেগমকে ফোন করে জানান, আবদুল জলিলের মৃতদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

সিনহা হত্যা মামলার বিচার কাজের সঙ্গে যুক্ত একাধিক আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষী ছেনুয়ারা বেগম, হাম জালাল ও আলী আকবর আদালতের কাছে ওসি প্রদীপের ঘৃণিত কাজের বিবরণ দিয়েছেন। ওসি প্রদীপ ও তার বাহিনী টাকা নিয়েও তাদের স্বজনদের হত্যা করেছে বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা তিনজনেই ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছেন বলে জানান আইনজীবীরা।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইনজীবী (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, এ পর্যন্ত সিনহা হত্যা মামলায় ১৭ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবারের সাক্ষীরা ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানায় থাকা অবস্থায় নিরীহ জনগণের উপর কিভাবে অত্যাচার চালাত তাই বর্ণনা করেছেন। বুধবার পর্যন্ত চলবে এ সাক্ষ্যগ্রহণ। এ মামলায় মোট ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে বলে জানান পিপি ফরিদুল আলম।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।

প্রসঙ্গত, ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহা নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। ঘটনার পর গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

আলোচিত এ মামলায় গত বছর ১৩ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়।

Share this post

scroll to top