সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে রোহিঙ্গা গণহত্যা সম্পর্কিত সব কনটেন্ট প্রকাশে মার্কিন আদালতের রায়কে বাংলাদেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এক প্রতিক্রিয়ায় এমনটা বলেছেন বলে জানিয়েছে ভয়েস অব আমেরিকা।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ন্যায়বিচারের পথে এই রায় একটি উৎসাহজনক অগ্রগতি।
গত ২০১৭ সালে সংগঠিত এই গণহত্যার পর ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই রায়ের পর ফেইসবুক কী করবে এখনো তা স্পষ্ট নয়।
তবে প্রতিষ্ঠানটির একটি বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আদালতের এ রায় পর্যালোচনা করে দেখছি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা বরাবরই আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের পক্ষে।
এতে বলা হয়, এই ঘটনার প্রাসঙ্গিক তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশ করার ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আইন অনুসরণ করে ইন্ডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ ম্যাকানিজম ফর মিয়ানমার (আইআইএমএম) এর কাছে এসব তথ্য প্রকাশ করেছি। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল আদালতের বিচারক জিয়া এম ফারুকী এই যুগান্তকারী রায় দেন। আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বা আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। এই অভিযোগ তদন্তে ফেইসবুকের এসব কনটেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান বিচারক এম ফারুকী।
গাম্বিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে ফেডারেল আদালত এই আদেশ দেয়। রায়ে বলা হয়, ফেইসবুক স্বীকার করেছে যে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশের অংশ হিসেবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ফেইসবুক ব্যবহার করেছে।
গত ২০১৮ সালে মিয়ানমার সরকারের এজেন্টদের অ্যাকাউন্ট ও তাদের প্রকাশিত কনটেন্টগুলো মুছে ফেলতে শুরু করে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, গণহত্যায় ইন্ধন জোগানো ওইসব কনটেন্ট মুছে ফেলেছিল ফেইসবুক। তবে এখন তাদেরকে পরবর্তী ধাপে এই কনটেন্টগুলো প্রকাশ করতে হবে।
৩২ পাতার ওই রায়ে আরও বলা হয়, ফেইসবুক তখন এই কনটেন্টগুলো শেয়ার করেনি। কিন্তু, এখন সে সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা যদি এ সময় সব কনটেন্ট শেয়ার করতে না চায় বা না করে তাহলে রোহিঙ্গাদের ট্রাজেডিকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
ঐতিহাসিক এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক অ্যাটর্নি পল রেচলার। তিনি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন।
আদালতে তিনি বলেন, ফেইসবুক রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণে সহায়তা করেছে। শুধু তাই নয়, ফেইসবুক ছিল এর প্রধান হাতিয়ার।
এ ঘটনায় রেচলার প্রচণ্ড হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য ফেইসবুক স্বেচ্ছায় এই কনটেন্টগুলো উপস্থাপন করেনি।
তিনি বলেন, এই রায় ফেইসবুক থেকে মুছে ফেলা তথ্যগুলো পাওয়ার সুযোগ করে দেবে।
হেগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ১৭ জন বিচারকের একটি প্যানেল থেকে মিয়ানমারকে গণহত্যার প্রমাণ বিনষ্ট না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।