স্কুলের টয়লেটে বাকপ্রতিবন্ধী ছাত্রীকে তালাবদ্ধ করে চলে গেল সবাই …..

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস করছিলেন শারমিন আক্তার নামের এক বাক্‌প্রতিবন্ধী দশম শ্রেণির ছাত্রী। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি বিদ্যালয়ের ওয়াশ রুমে যান। এমন সময় ক্লাস ছুটি হলে টয়লেটে তালা মারতে যায় বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শাহানারা আক্তার শানু। এ সময় শারমিন ভেতর থেকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও বাক্‌প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন শব্দ করতে পারেনি। ভেতর থেকে বন্ধ থাকা সত্ত্বেও তা যাচাই না করেই বাইরে থেকে টয়লেট তালাবদ্ধ করে ফিরে যায় ওই কর্মচারী। এতে সকলেই বাড়ি ফিরলেও ওয়াশ রুমে আটকা পড়ে শারমিন। অবশেষে রাত ১০টার দিকে এক পথচারী যুবকের কল্যাণে মুক্ত হয় সে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।

বাক্‌প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবার।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, আমি ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নই। তবে এমন কোন কিছু হয়ে থাকলে দায়ী ব্যক্তিরা কোন ছাড় পাবে না। আগামীকাল আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব।

প্রত্যক্ষদর্শী যুবক আল আমিন বলেন, রাত ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় বিদ্যালয়ের টয়লেট থেকে গোঙানির শব্দ শুনতে পাই। পরে টয়লেটের ভেন্টিলেটর দিয়ে মোবাইলের আলো জ্বেলে মানুষ দেখতে পেয়ে ভূত বলে চিৎকার দিই। পরে আশপাশের লোকজন উপস্থিত হলে তালা ভেঙে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়।

শারমিনের বাবা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, স্কুল ছুটি হলেও আমার মেয়ে বাড়ি ফিরছে না দেখে আমরা অজানা আতঙ্কে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকি। তার সহপাঠী ও স্বজনদের বাড়িতে হন্য হয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন আমার মেয়েকে টয়লেটের তালা ভেঙে ভেতর থেকে উদ্ধার করে।

তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমার মেয়ে ক্লাসরুমে তার বই, খাতা, স্কুল ব্যাগ রেখে টয়লেটে গেছে। শিক্ষকেরা বই, খাতা দেখেও কি বুঝতে পারেনি একজন ছাত্রী নেই। এমনকি যখন টয়লেট বন্ধ করতে গেছে, তখনো কি তারা দেখেনি যে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ! এই ঘটনার পর থেকে ভয়ে, আতঙ্কে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমীর হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ক্লাস ছিল। আমি প্রাতিষ্ঠানিক কাজে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করলেও তখনো পর্যন্ত তেমন কোন কিছুই জানতে পাইনি। রাতের বেলা এক ছাত্রী টয়লেটে আটকা থাকার খবর পাই। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যিনি ক্লাস নিচ্ছিলেন সেই শিক্ষকের শিক্ষার্থীর প্রতি আরও খেয়াল রাখা উচিত ছিল। তা ছাড়া ভেতর দিয়ে বন্ধ থাকা টয়লেট বাইরে দিয়ে তালা দেওয়াও ঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের কারও গাফিলতি পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share this post

scroll to top