বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশ আয়োজন করে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষার অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক এক বর্ণাঢ্য আলোচনা সভার।
কিন্তু এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অংশ নেননি অধিকাংশ শিক্ষক। ছিল কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতির ঘটনা। ছিলো না স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তোয়াক্কা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে পাঁচশত শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি শিক্ষকই অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা, কর্মচারী থাকবে, ময়মনসিংহ শহর থেকে হয়ত দুই একজন আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষকলীগের নেত্রীবৃন্দ থাকবেন এমনটাই কাম্য। কিন্তু ময়মনসিংহের অন্যত্র থেকে ট্রাকে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষ আসবে এটা কখনই কাম্য ছিল না। তাছাড়া এ ধরনের প্রোগ্রামে ক্যাম্পাসের ভেতরে ১০-১২ টি মাইক ব্যবহার করা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোভা পায় না। যে অনুষ্ঠানটি হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ মেজাজের কোনো অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা ছাত্রছাত্রীর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না।
জানা যায়, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। এছাড়াও ময়মনসিংহের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৫-৫০ জন শিক্ষককে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও ময়মনসিংহের মেয়র ইকরামুল হক টিটুর সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
অনুষ্ঠানের আয়োজক গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, শিক্ষকদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি বা মূল্যায়ন করা হয়নি এমন তথ্য সত্য নয়। অনেক শিক্ষক স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে হয়তো অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। আমরা আমাদের সাধ্যমত সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।
গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের আরেক অংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সালেহ মাহফুজুল বারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামীপন্থি শিক্ষকের সংগঠন থেকে বেরিয়ে যাওয়া কিছু বামপন্থি শিক্ষক, খুব বেশি হলে এদের সংখ্যা ৩০-৩৫ জন, যারা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানটি যদি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে করা যেত তাহলে সেখানে স্বতস্ফূর্তভাবে শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করত। বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা সভায় এত কম শিক্ষক অংশ নিয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। বন্ধ ক্যাম্পাসে এ ধরনের প্রোগ্রাম মানায় না। করোনা মহামারীর এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন সত্যিই দৃষ্টিকটু।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, বাইরে থেকে এত মানুষ আসবে এটা আমি জানতাম না। আয়োজক কমিটি আমাকে আগে থেকে বিষয়গুলো সেভাবে অবহিত করেনি। আয়োজকরা করোনা মহামারীর মধ্যে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ নিয়ে অনুষ্ঠান করবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। অনুষ্ঠান ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনসহ অপ্রীতিকর যেগুলো ঘটনা ঘটেছে তার দায়ভার আয়োজকদের।