দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশি পিতা ও জাপানি মায়ের বিরোধের সমঝোতার জন্য উভয়পক্ষকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই দিন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে একদিন পিতা ও একদিন মা মেয়েদের সঙ্গে থাকবেন বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে পরদিন শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত মা এবং ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত পিতার থাকবেন। এভাবে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মা ও বাবা পর্যায়ক্রমে একদিন পর একদিন মেয়েদের সঙ্গে থাকতে পারবেন বলে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পিতা ইমরান শরীফের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট ফৌজিয়া করিম ফিরোজ ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। মাতা নাকানো এরিকোর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে দুই কন্যা শিশুকে নিয়ে জাপানে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন মা নাকানো এরিকো। আবেদনে বলা হয়েছে, এই অনুমতি পেলে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মেয়েদের নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন মা। মেয়েরা পিতার সঙ্গে সময় কাটাবে। আর পিতা জাপানে যে ঋণ আছে তা মা দেবে এবং পিতার বিরুদ্ধে জাপানে যে মামলা করেছে জাপান সরকার তা তুলে নিতে পদক্ষেপ নেবে মা। তাতেও যদি রাজি না হন, তাহলে তৃতীয় কোনো দেশে বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন পিতা। সেখানে যাবতীয় খরচ মা বহন করবেন। আইনজীবী শিশির মনির এ আবেদন উপস্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি মা ও বাবার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার আবেদন জানান।
এসময় ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এর বিরোধিতা করে বলেন, শিশু দুটিকে একবার জাপানে নিয়ে যেতে পারলে আর তাদের বাংলাদেশে আনা যাবে না। আমাদের আদালতের আদেশ তারা মানবে না।
তিনি বলেন, বাচ্চারা বাংলাদেশেই থাকুক। মা যখন খুশি এসে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন। মা যখন বাংলাদেশে আসবেন তখন প্রয়োজন হলে পিতা বিমানের টিকিট কেটে দেবেন। সব ব্যবস্থাই পিতা করবেন। মা-বাবার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণের আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, সমঝোতার স্বার্থে এখন যে অবস্থা আছে সে অবস্থায়ই রাখা হোক।
উভয়পক্ষের শুনানিকালে আদালত বলেন, মা-বাবার কারণে আজ বাচ্চা দুটি সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তারাই মূল ভিকটিম। তাই এর একটি সমাধান হওয়া দরকার।
হাইকোর্টের এই বেঞ্চ গত ৮ সেপ্টেম্বর এক আদেশে ৯, ১১, ১৩ ও ১৫ সেপ্টেম্বর-এই চারদিন দিবাগত রাতে মেয়েদের সঙ্গে মাকে থাকার অনুমতি দেন। অন্য সময় মা ও পিতা উভয়েই থাকতে পারবেন ওই বাসাতে। কন্যা শিশু দুটিকে নিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরিরও অনুমতি দেন হাইকোর্ট। এছাড়াও মেয়ে দুটির মা ও পিতাকে নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে প্রচারিত সকল ভিডিও অপসারণে পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এসব ভিডিও নির্মাতা এবং আপলোডকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে গত ৩১ আগস্ট একই হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই দুই কন্যা শিশুকে আপাতত আগামী ১৫ দিন জাপানি মা ও বাংলাদেশি পিতার সঙ্গেই গুলশান এক নম্বরে চার কক্ষের একটি ভাড়া বাসায় থাকার নির্দেশনা দেন। এরপর শিশু দুটিকে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে ওই বাসাতে স্থানান্তর করা হয়। এখন পর্যন্ত ওই বাসাতেই তারা আছেন।
এদিকে মানহানিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে জাপানি নারী এরিকো নাকানোকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন তার স্বামী ইমরান শরীফ। একইসঙ্গে নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে নাকানো এরিকোকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ইমরান শরীফের পক্ষে তার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম এ নোটিশ পাঠান। নাকানো এরিকোর গুলশান-২ এর ঠিকানায় এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, জাপান থেকে কন্যা শিশু দুটিকে নিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসেন পিতা ইমরান শরীফ। দেশে ফিরে সন্তান দুটিকে ঢাকায় কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এ অবস্থায় গত ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর বাংলাদেশের হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মা এরিকো। এ আবেদনে হাইকোর্টের আদেশের পর গত ২২ আগস্ট রাতে শিশু দুটিকে পিতার বাসা থেকে উদ্ধার করে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে সিআইডি পুলিশ। এ অবস্থায় গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট খাসকামরায় শিশু দুটি ছাড়াও তাদের মা-বাবার বক্তব্য শোনেন।