নেত্রকোনার পূর্বধলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের জাওয়ানী ও ভুগি গ্রামে জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা এবং সুস্থদের প্রতিবন্ধী বানিয়ে ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আবুল কালাম খান এবং উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে এমন অনিয়ম করা হয়েছে। এক বছর ধরে উপকারভোগীরা ভাতা তুলছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা মো. সুমন মিয়া।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ‘ইউপি সদস্য আবুল কালাম খান টাকার বিনিময়ে ১২ জন জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা এবং বেশ কয়েকজন সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধীর কার্ড করে দিয়েছেন। তাকে টাকা দিলে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেন। টাকা না দিলে কোনও ধরনের সরকারি অনুদান পাওয়া যায় না।’
সরেজমিনে দেখা যায়, জাওয়ানী গ্রামের বিধবা ভাতাভোগী এখলাছ উদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহানের হিসাব নম্বর ১৬০৪৫, হাসেন আলীর স্ত্রী কুলসুমার হিসাব নম্বর ১৬১৩৪, আলী নেওয়াজের স্ত্রী যবেদার হিসাব নম্বর ১৪৯৫৫, জহর উদ্দিনের স্ত্রী রুমেলার হিসাব নম্বর ১১৫৬৫৩, হাসিম উদ্দিনের স্ত্রী হালিমার হিসাব নম্বর ১৪৮০০, আব্দুর রহিমের স্ত্রী আছিয়া বেগমের হিসাব নম্বর ৪৫৪, সিদ্দিক খানের স্ত্রী রানু বেগমের হিসাব নম্বর ১৫৬৫৪, মরম আলীর স্ত্রী মাহমুদার হিসাব নম্বর ১২৫, বজলুর রহমানের স্ত্রী জমিলার হিসাব নম্বর ৪৯, রইছ উদ্দিনের স্ত্রী ফিরোজার হিসাব নম্বর ৬২ এবং ভুগী গ্রামের নবী হুসেনের স্ত্রী জুলেখার হিসাব নম্বর ৫৮ ও আবু হোসেনের স্ত্রী নাসিমার হিসাব নম্বর ১৬৩২২। এই ১২ জনের স্বামী জীবিত। অথচ নিয়মিত বিধবা ভাতা তুলছেন তারা।
এদিকে, প্রতিবন্ধী না হয়েও প্রতিবন্ধীর কার্ড পেয়েছেন জাওয়ানী গ্রামের আব্দুল হেলিমের প্রবাসী ছেলে শহিদ খান। তার কার্ড নম্বর ০৩৭২০০১৫৬৫০। বিদেশে থাকলেও তার নামে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা তোলা হয়। একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে রিয়াজ উদ্দিনের কার্ড নম্বর ০৩৭২০০১৫৬৩৬, আব্দুল মজিদ খানের ছেলে কামাল খানের কার্ড নম্বর ০৩৭২০০১০৩৯৩ ও হাসেন আলীর ছেলে লাল মিয়ার কার্ড নম্বর ০৩৭২০০১০৩৮৯। তারা শারীরিকভাবে সুস্থ। অথচ নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন। জাওয়ানী ও ভুগী গ্রামে বর্তমানে ৫১ জন বিধবা ভাতা এবং ৫০ জন প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আছেন। হিসাবে এর মধ্যে ১৬ জনই প্রতারণা করে ভাতা তুলছেন।
অভিযোগকারী সুমন মিয়া বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে আমাকে এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। স্থানীয় প্রশাসনের নিরাপত্তা চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আবুল কালাম খান বলেন, ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে নিয়ম মেনেই ভাতার কার্ডের কাগজপত্র জমা দিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে উপকারভোগীরা ভাতার টাকা তুলছেন। কোনও অনিয়ম হয়নি।
নেত্রকোনা জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আলাল উদ্দিন বলেন, ভাতা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব ইউনিয়ন কমিটির। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভাতা কার্যক্রম কমিটির সভাপতি, সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী কমিটির সদস্য সচিব এবং ইউনিয়ন পরিষদের সব সদস্য কমিটির সদস্য। ইউনিয়ন কমিটি ভাতার তালিকা তৈরি করে উপজেলা কমিটিতে পাঠায়। উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান, সহ-সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং সব ইউপি চেয়ারম্যান কমিটির সদস্য। উপজেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করে তালিকায় অনিয়ম কিংবা অভিযোগ পেলে মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে বৈধ আবেদনকারী চূড়ান্ত করে অনুমোদন দেয়। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী ভাতা দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রমাণিত হলে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য জেলা সমাজসেবা উপপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’