বিটিআরসি ঘুমাচ্ছে: হাইকোর্ট

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও অপসারণকে কেন্দ্র করে বিটিআরসি’র ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘বিটিআরসি ঘুমাচ্ছে। এ বিষয়ে তাদের এমনিতেই ক্ষমতা আছে। তারপরও কি আমরা তাদের প্রত্যেক দিন ইনস্ট্রাকশন দেবো?’

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

শুনানির শুরুতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘বিটিআরসির কাছে কোনও আবেদন না করেই জনস্বার্থে এ রিট আবেদনটি করা হয়েছে। তাছাড়া আরেকটি বেঞ্চ থেকে একই ধরনের আদেশ হয়েছে, রুল জারি হয়েছে।’

তখন আদালত বলেন, ‘বিটিআরসি কী করে? তাদেরকে প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিয়ে এগুলো বন্ধ করতে হবে? সমাজটা উচ্ছন্নে যাচ্ছে!’

জবাবে নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, ‘অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো কোনও ধরনের গাইডলাইন ফলো করছে না। তাদের কোনও অনুমতিরও দরকার নেই অনেক সময়ে। যে কারণে অনুমতি ও গাইডলাইন ফলো করার জন্য একটি রুল ইস্যু হয়েছে।’

আদালত প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বিটিআরসি এগুলো (ভাইরাল ভিডিও, ছবি) সংরক্ষণ করে নাকি পড়ে? প্লেজার ফিল করে? দেখতে তাদের ভালো লাগে? তারা এসব উপভোগ করে? আমরা সন্তান-সন্ততি নিয়ে থাকি না? আমাদের একটি পরিবার আছে না? টোটাল সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়, কেন? সঙ্গে সঙ্গেই উনারা (বিটিআরসির কর্তা ব্যক্তিরা) বন্ধ করে দিতে পারে।’

আদালত আরও বলেন, ‘বিটিআরসি বসে বসে কী করে? আর আপানারা (আইনজীবীরা) সবাই আসেন আমাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করার জন্য। চান বিটিআরসিকে একটা ডিরেকশন দেই, কেন দেবো আমরা? আমরা তো আল জাজিরার মামলায় বলেছি, সব ক্ষমতা বিটিআরসির আছে এগুলো বন্ধ করার জন্য। তারপরেও একটা একটা (রিট আবেদন) করে নিয়ে আসা হচ্ছে আমাদের কাছে।’

আদালত বলেন, ‘আমরা বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে ডাকি তাহলে, ফিজিক্যালি অ্যাপিয়ার হোক, বলি যে কেন এগুলো (বন্ধ বা অপসারণ না করা) করছেন? আপনি ওখানে কী জন্য বসে আছেন? তাদের শক্ত হাত আছে এগুলো মেনটেন করার। তাও তারা করে না। হাইকোর্টের নির্দেশনা না হলে পরে এগুলো কেউ কোনও পাত্তা দেয় না।’

নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, প্রতিটা ঘটনার জন্য তো আলাদা আলাদা আদেশের প্রয়োজন নেই। সবকিছু মিলিয়ে একটি রায় হলেই হয়।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘কোনও প্রয়োজন নেই। আমরা যে ছয় জন অ্যামিকাস কিউরিয়াস এনেছিলাম, কামাল উল আলম (আইনজীবী) কোথায় কী অছে না আছে (আইনে) বিস্তারিত আমাদের দেখিয়েছেন। এরপরও বিটিআরসি ঘুমাচ্ছে। বিটিআরসির এমনিতেই ক্ষমতা আছে। আমরা সুনির্দিষ্ট করে তাদের নীতিমালা করে দিয়েছি। তারপরও কি আমরা তাদের প্রত্যেক দিন ইনস্ট্রাকশন দেবো?’

এরপর আদালত রিট আবেদনকারী আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদের কাছে জানতে চান, আবেদনটি করার আগে তাদের (মোসারাত জাহান মুনিয়া,সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও পরীমণির) ব্যক্তিগত বা গোপন ভিডিও, ছবি, প্রতিবেদন অপসারণ করতে বিটিআরসিকে কোনও নোটিস দেওয়া হয়েছিল কিনা?

জবাবে রিটকারী আইনজীবী বলেন, না।

এরপর রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৫ আগস্ট কারও ব্যক্তি চরিত্র হনন করে করা প্রতিবেদন বা ভাইরাল হওয়া ছবি-ভিডিও সব অনলাইন মাধ্যম থেকে অপসারণ ও এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়া নুহাইয়া আহমেদ এই রিট দায়ের করেন।

রিটে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিটিআরসি’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

Share this post

scroll to top