জামালপুরে বন্যা, ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন

জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ও দশআনী নদীর পানি হুহু করে বাড়ছে। উপজেলার ১২ ইউনিয়নে মধ্যে সাত ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে ভাসছে। তলিয়ে গেছে শত শত একর রোপা আমন ও শাকসবজির খেত, বীজতলা, রাস্তাঘাটসহ দুই ডজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। পানিবন্দী হয়ে পড়ছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যেই নদ-নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে পাঁচ শতাধিক বসতভিটা। ভাঙনের মুখে রয়েছে একাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম, স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ অসংখ্য স্থাপনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনার তীরবর্তী সাপধরী ইউনিয়নের পুরো এলাকা পানিতে থৈ থৈ। চেঙ্গানিয়া, মণ্ডলপাড়া, শিশুয়া, বিশরশি, আকন্দপাড়া এলাকায় ভাঙনে অন্তত অর্ধশতাধিক বাড়িঘর যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ইউনিয়নে অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে চেঙ্গানিয়া, প্রজাপতি, চরশিশুয়া, বীর নন্দনের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাপধরী উচ্চ বিদ্যালয়।

কুলকান্দী ইউনিয়নের পশ্চিম ভেড়কুশা, জিগাতলা, পূর্ব জিগাতলা, আকন্দপাড়া এলাকায় ভাঙনে অন্তত দুই শতাধিক বাড়িঘর যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। ৩টি ওয়ার্ডের ৯৫ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত পূর্ব জিগাতলা ও পশ্চিম জিগাতলার দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্প, দুটি গুচ্ছগ্রামসহ জিগাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। বেলগাছা ইউনিয়নের পশ্চিমাঞ্চলের অসংখ্য বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া নোয়াপাড়া ও চিনাডুলী ইউনিয়নে ঘরে ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ভানবাসীরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পানিতে তলিয়ে গেছে পশ্চিম বলিয়াদহ কমিউনিটি ক্লিনিক, চিনাডুলী এস এখন উচ্চ বিদ্যালয়, দেওয়ানপাড়া দাখিল মাদরাসা, ডেপরাইপেচ, দক্ষিণ চিনাডুলী ও বীর নন্দনেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে পলবান্দা ইউনিয়নের পূর্ব সিরাজাবাদ গ্রামের শতাধিক, গোয়ালেচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর বালুরচর ও সভারচর গ্রামের শতাধিক , চরগোয়ালী ও চরপুটিমারী ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাবাড়ি নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে। গাইবান্ধা ইউনিয়নের চন্দনপুর ও ডাকপাড়া গ্রামের অর্ধতাধিক বসতভিটা দশআনী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। পানির স্রোতে নদী ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষেরা তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময়ও পাচ্ছে না।

সাপধরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন যমুনা নদীর মধ্যবর্তী হওয়ায় পানি বাড়লেই তলিয়ে যায় ইউনিয়নের সবগুলো গ্রাম। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করা হলে ইন্দুলামারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

চিনাডুলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। অনেকের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

কুলকান্দী ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ওবায়দুল হক বাবু বলেন, দুই শ’ পরিবার নদী ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছেন। ভয়াবহ বন্যায় চরম দুর্দশায় রয়েছে বানবাসী মানুষ।

পাথর্শী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বাবলু বলেন, ১৩টি গ্রামে ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী। বহু বাড়িঘর পানিতে ভাসছে।

বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, বসত ঘরে বন্যার পানি ঢুকায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে। মন্নিয়া গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, বন্যার্তদের জন্য ১৫ মেট্রিক টন চাল ও দুই লাখ ১২ হাজার টাকা ও শুকনো খারার বিতরণ শুরু হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর সময় মতো বন্যা না হওয়ায় আর বন্যা হবে না-এমন ধারণা থেকে কৃষকেরা জমিতে বিভিন্ন ফসল ও বীজ রোপণ করেছেন। কিন্তু অসময়ের বন্যায় কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Share this post

scroll to top