৫ বছর পর জীবিত হলেন ১৯ মৃত ব্যক্তি

যশোরের চৌগাছায় পাঁচ বছর পরে ভোটার তালিকায় জীবিত হলেন ১৯ জন মৃত ব্যক্তি। ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তাদেরকে মৃত দেখানো হয়েছিল।

সবশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় প্রায় দুই হাজার মৃত ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। এ সময় ভুলবসত প্রায় ৫০-এর বেশি জীবিত ব্যক্তির নাম মৃত ভোটার তালিকায় স্থান পেয়েছিল।

ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচন অফিসে ২৪ জন ভোটার নিজেদের জীবিত দাবি করে আবেদেন করেছেন। আবেদনের ফলে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সুপারিশে ১৯ জন ভোটার ইতোমধ্যে আবারো জীবত ভোটার তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

আর পাঁচজনের তালিকা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার সেলিম রেজা।

তিনি বলেন, তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধনকারীদের ভুলে এতদিন তারা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকা সত্ত্বেও সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন।

উপজেলা নির্বাচ অফিস সূত্রে জানা যায়, নতুন করে ভোটার তালিকায় মৃত থেকে জীবিতদের তালিতকায় যারা স্থান পেয়েছেন তারা হলেন, চৌগাছাপৌরস শহরের বাকপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান শেখ (৬৭), কারিগরপাড়ার হাবিবুর রহমান (৪২), হালদারপাড়ারআন্না রানী (৪১) ও ইছাপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম (৫২)।

এ ছাড়া উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের আফরা গ্রামের হামিদা বেগম (৪০), পাশাপোল ইউনিয়নের পলুয়া গ্রামের ঈমান আলী (৫৫), নারায়নপুর ইউনিয়নের বাদেখানপুর গ্রামের আয়ুব হোসেন (৪৫) ও দাউদ হোসেন (৫৪), একই ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম মৃধা (৫২) ও পেটভরা গ্রামের কায়েম আলী বিশ্বাস (৬০), স্বরুপদহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা গ্রামের জামেনা খাতুন (৪২), গদাধরপুর গ্রামের আম্বিয়া খাতুন (৪২) ও বাজে খড়িঞ্চা গ্রামের মফিজ উদ্দীন (৪৭), পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের ওসমান সরদার (৭০), মুক্তদহ গ্রামের হাফিজুর রহমান (৪৫), নিয়ামতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৭০) ও পাতিবিলা গ্রামের ইছাহক আলী মিয়া (৫৫), সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়া গ্রামের আব্দুলকরিম (৫০) ও রামকৃষ্ণপুর গ্রামের শাহানুর মন্ডল (৪৪)।

এদিকে ভোটার তালিকায় জীবিত হওয়ার জন্য যে পাঁচজন নতুন করে আবেদন করেছেন তারা হলেন, সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের খদেজা বেগম (৬৫), হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামের সাফিয়া বেগম (৫৪),পাশাপোল ইউনিয়নের পাশাপোল গ্রামের নাজমা বেগম (৪৫), নারায়ণপুর ইউনিয়নের বুন্দুলিতলা গ্রামের হানিফ আলীবিশ্বাস (৭২) এবং ফুলসারা ইউনিয়নের সলুয়া গ্রামের ইমদাদুল হক (৫৭)।

আবেদনকারী বুন্দুলিতলা গ্রামের হানিফ আলী বিশ্বাস জানান, টিকার নিবন্ধন ও জমি কাগজপত্র অনলাইন করতে গিয়ে জানতে পারেন তিনি ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন। জীবিত প্রমাণ করতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছেন।

নিয়ামতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার তালিকায় দেখি আমার নাম নেই। তবে ভোট দিয়েছিলাম। সমস্যা হয়নি। ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। নির্বাচন অফিসে গিয়ে দেখি আমি মৃত।

তিনি বলেন, সেই থেকেই সুবিধা বঞ্চিত ছিলেন। জীবিত হওয়ার জন্য ঘুরেছেন বছরের পর বছর।

গত ৭ জুন উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবেদকারী ভোটাররা সকলেই জীবিত আছে মর্মে বিশেষ সুপারিশ করে নির্বাচন কমিশন অনুসচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের মহাপরিচালকের দফতরে পাঠান। এর পরে তাদের তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে জীবিত দেখানো হচ্ছে।

মুক্তদহ গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, জীবিত হতে পেরে ভালো লাগছে। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক চৌগাছা শাখায় নিজ নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে তারা বলেন, এই কার্ডের কোনো তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে কম্পিউটারে চেক করে বলেন, ভোটার তালিকায় আপনাকে মৃত দেখানো হয়েছে। আমি বলি, কীভাবে মৃত হলাম?। তারা আমাকে বলেন, চেয়ারম্যানের সনদসহ কাগজপত্র অফিসে জমা দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, নতুন আবেদনকারীদের নাম তালিকায় পুনঃঅন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইসি সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯ জন মৃত দেখানো ব্যক্তির ভোটার তালিকায় জীবিত দেখিয়ে তথ্য সংশোধন করা হয়েছে। তারা আগের আইডি কার্ডেই এখন সরকারি সকল সেবা নিতে পারবেন।

Share this post

scroll to top