ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে প্রবাসী বড় ছেলের অর্থ-সম্পদ ভোগ দখল করতে বাবা, মা ও ছোট ছেলে মিলে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে অপর ছেলেকে । ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পাগলা থানার চাকুয়া গ্রামে। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হতভাগা শারফুল ঢালী বৃহস্পতিবার (২৬ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ছয়টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনার পর থেকৈ অভিযুক্ত বাবা, মা ও ছোট ভাই পলাতক রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার চাকুয়া গ্রামের ইসহাক ঢালীর (৫৮) ছেলে শারফুল ঢালী দীর্ঘ ৮ বছর লেবাননে প্রবাসী ছিলেন। গত ছয় মাস পূর্বে সে দেশে ফিরে প্রবাসে কর্মরত থাকাকালে পরিবারের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো আয়-রোজগারের টাকার হিসেব চান। দেশে ফেরত আসার পর তার পিতা তাকে শারফুলের উপার্জনের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় । এমনকি হাতখরচের টাকাও শারফুল ঢালী তার পিতার কাছে চেয়ে পেতো না। এ নিয়ে পিতা পুত্রের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হতো। পিতার রোষানলে এর আগেও পড়েছিল শারফুল। তগ ৩মাস আগে শারফুলকে তার বাবা একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠান। জেল থেকে এসে কয়েকদিন পর আবারও তার উপার্জনের টাকা ফেরত চাইলে গত বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টার পিতা ইসহাক ঢালী, মা হোসেনা আরা (৪৭), ছোট ভাই আশরাফুল ঢালী(২৮) লোহার রড ও শাবল দিয়ে শারফুল ঢালীর মাথা, পা ও বুকে এলাপাথারী পিটিয়ে গুরুতর জখম করে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় বসতঘরের একটি রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। শারফুল ঢালীকে মারার সময় তার চিৎকারে চাচা-চাচীসহ এলাকাবাসী উদ্ধার করতে গেলে ইসহাক ঢালী, হোসনে আরা, আশরাফুল ঢালী রড, শাবল ও রামদা দিয়ে এলাকাবাসীকে তাড়া দেয়। দীর্ঘসময় আহত শারফুল ঢালীর সাড়াশব্দ না পেয়ে তার চাচা নুলুল ইসলাম ঢালী ( ৫৬) মো. ইসমাইল ঢালী, চাচী নাছিমা খাতুন (৪৬) স্থানীয় ইউপি (নিগুয়ারি) চেয়ারম্যান শেখ শাহাবুদ্দিনকে ঘটনাটি জানায়। ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শাহাবুদ্দিন স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে শারফুল ঢালীকে তাদের বাড়ি থেকে মূমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ২৪ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে শারফুল ঢালী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
নিহতের চাচা নূরুল ইসলাম ঢালী জানান, বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা নিয়ে ছেলে শারফুল ঢালীর সাথে তার পিতা-মাতার প্রায়ই ঝগড়া হতো। বুধবার সকালে ঝগড়ার এক পর্যায়ে তার ভাই ইসহাক ঢালী, ভাবী হোসনে আরা ও ভাতিজা আশরাফুল ঢালী লোহার রড, শাবল দিয়ে এলাপাথারী পিটিয়ে তার অপর ভাতিজা শারফুলকে গুরুতর জখম করে, অর্ধমৃত অবস্থায় একটি রুমে ফেলে রেখে ওই রুম তালা মেরে রাখে।
প্রতিবেশি মোশাররফ খান জানান, শারফুল ঢালী ভাই বোনের মধ্যে বড়। তার ১ ভাই ও ২ বোন রয়েছে। শারফুল পরিবারের সমস্ত খরচাদি বহন করতেন।
পাগলা থানার ওসি মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে । একটি হত্যা মামলা দায়েরে প্রস্ততি চলছে।