লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে এমপি পদে দলের মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো: দেলোয়ার হোসেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন পাননি। এবার সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে শক্ত প্রার্থী তিনি। ইতোমধ্যে তৃণমূল থেকে তার নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এবার দলের মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বেশ আশাবাদী। কেন্দ্রীয় যুবলীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সামসুল ইসলাম পাটোয়ারী লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবার তিনিও সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী। তার নামও কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তিনিও আশাবাদী। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ পিরোজপুর-৩ আসনে এমপি পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবার তিনি মঠবাড়িয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চান। কেন্দ্রে তার নাম পাঠানো না হলেও ইতোমধ্যে তিনি ফরম জমা দিয়েছেন।
এভাবে দেশের বেশির ভাগ উপজেলায় দলের মনোনয়ন চান একাদশ জাতীয় সংসদে মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তারা দিনরাত তদবির-লবিং করে যাচ্ছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। নিজ এলাকা ছেড়ে সবাই এখন অবস্থান করছেন ঢাকায়। দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের নানা মাধ্যমে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তারা। চেয়ারম্যান পদে একমাত্র নিজেকেই যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরছেন তারা। এ ক্ষেত্রে অনেকেই আবার সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েও না পাওয়ার বিষয়টিকে বড় করে তুলে ধরছেন।
উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলটির প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘দলের গঠনতন্ত্রের ২৮(৪) ধারা মোতাবেক জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ করে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের (চারজন) স্বাক্ষরে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রার্থী অথবা অনধিক তিনজনের একটি প্রার্থী তালিকা ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।’ তালিকার সাথে প্রার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও পাঠাতে বলা হয় ওই চিঠিতে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, প্রথম দিকে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূল থেকে পাঠানো নামের মধ্য থেকেই মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা ছিল; কিন্তু তৃণমূল থেকে পাঠানো নাম নিয়ে কেন্দ্রে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ে। কোথাও কোথাও স্থানীয় এমপির প্রভাব, কোথাও কেন্দ্রীয় নেতার প্রভাব আবার কোথাও জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠে। প্রাথমিকভাবে অনেক অভিযোগের সত্যতাও পায় কেন্দ্র। এমন প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন ফরম উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে প্রায় দুই হাজার ফরম জমা পড়েছে। আর কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূল থেকে পঠানো নামের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত অনেকেই রয়েছেন। আবার অনেক জেলা থেকে কোনো কোনো এমপি প্রার্থীর নামও প্রস্তাব করা হয়নি। তারা সরাসরি কেন্দ্র থেকে দলের মনোনয়ন তুলে জমা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, ব্রহ্মণবাড়িয়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জয়পুরহাট, রাজশাহী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বেশির ভাগ জেলায় অসংখ্য এমপি প্রার্থী এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও প্রার্থী হয়েছেন কেউ কেউ। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ কৌতূহলও রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীয় পর্যায়ের তিনজন নেতা আলাপকালে বলেন, ‘এবার সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড-সংখ্যক চার হাজারেরও বেশি ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ; কিন্তু শরিকদের বাদ দিলে মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র ২৭৩ জন। বাকি সবাই বাদ পড়েছেন। এখন তাদের অনেকেই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চান।’
একজন নেতা বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে সবাই আসলে এমপি হতে ফরম ক্রয় করেননি। কেউ কেউ ফরম কিনে আলোচনায় থাকতে চেয়েছেন। কেউ ফরম কিনে নেত্রীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ খুঁজেছিলেন। আবার কেউ কেউ সংসদ নির্বাচনের পরের উপজেলা নির্বাচনকেই টার্গেট করে ফরম নিয়েছেন। যাতে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত বলে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। তবে তাদের মধ্যে যারা যোগ্য তারা অবশ্যই এবার উপজেলায় মনোনয়ন পাবেন।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, ‘এ পর্যন্ত উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রায় দুই হাজার ফরম জমা পড়েছে। তাদের মধ্যে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে।’