বহু জাতি-গোষ্ঠীর দেশ আফগানিস্তান। যুগ যুগ ধরে দেশটির যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত-রাজনীতি তার মূলে রয়েছে এই জাতিবৈচিত্র্য বা জাতিবিদ্বেষ। তালেবানের সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও এটাকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে সব জাতি-গোষ্ঠীরই সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকে। এএফপি।
স্থলবেষ্টিত পর্বতময় দেশ আফগানিস্তানের চারপাশে ঘিরে রয়েছে ইরান, পাকিস্তান, চীন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও চীন। আফগানিস্তান শব্দটির অর্থ আফগান জাতির দেশ। দেশটি প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য সেই কথারই সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হলো পশতু জাতি। যারা আগে আফগান নামে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, বরং জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিককেই বোঝায়।
বর্তমানে আফগানিস্তানের প্রায় চার কোটি মানুষের ৪৪ শতাংশই পাখতুন বা পশতু। এরা পশতুভাষী। নিজেদেরকে পাঠান জাতি বলে গর্ব করে। প্রাচীনকাল থেকে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে তাদের বাস। আঠার শতক থেকেই আফগান রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে এই গোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আগের দুই সরকারের দুই প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও আশরাফ ঘানিও পশতু জাতির। আবার হালের তালেবানরাও পশতু জাতীয়তাবাদী। দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি-গোষ্ঠী তাজিক। আফগান জনগণের এক-চতুর্থাংশের বেশি এরা। এদের বাস মূলত পঞ্জশির ও হেরাতসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে। কথা বলে ফারসির উপভাষা দারিতে, যা আফগানিস্তানের অন্যতম জাতীয় ভাষাও। তাজিকদের সবচেয়ে বড় নেতা আহমদ শাহ মাসুদকে ‘পঞ্জশিরের সিংহ’ বলা হয়। এ ছাড়া তাজিকদের আরেক বড় নেতা বুরহানউদ্দিন রাব্বানি যিনি ১৯৯২-৯৬ পর্যন্ত আফগান প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। আফগান ঘানি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহও জাতিতে তাজিক। এর বাইরে উজবেক, তুর্কমেন, হাজারাসহ রয়েছে আরও প্রায় ডজনখানেক জাতিগোষ্ঠী। এবং এসব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিটিরই অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সরকার গঠনে সবার সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়া তালেবানের পক্ষে আফগানিস্তানের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব। আগের তালেবান শাসনের সময়ও এটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আবারও সেই চেষ্টাই অব্যাহত রেখেছে তালেবান। মাইনরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনালের পিপলস আন্ডার থ্রেট ইনডেক্স’র গত বছরের তথ্য মতে, আফগানিস্তান বিশ্বের চতুর্থ ভয়ানক দেশ যেখানে নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা, নির্যাতন-নিপীড়ন ও ঢালাও হত্যাকাণ্ডের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।