সবই খোলা, বন্ধ শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান!

করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দেড় বছর ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাতিল হয়েছে গত বছরের প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি, এইচএসি পরীক্ষা।

চলতি বছরেও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে সংশ্লিষ্টদের। এক বছর পিছিয়ে পড়েছে স্নাতক ভর্তিচ্ছুরা। সবমিলিয়ে এক হ য ব র ল অবস্থা বিরাজ করছে শিক্ষায়।

অন্যদিকে দেখা গেছে গার্মেন্টস, সিনেমা হল, বিনোদন কেন্দ্র, শপিংমল সবই খোলা। কোথাও থেমে নেই কোলাহল। সবকিছুই স্বাভাবিক থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, এভাবে চলতে পারে না। সব খোলা রেখে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত হতে পারে না। অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে কয়েকদফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে ঢাবি ক্যাম্পাসে ভিসির বাসভবনের অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে নীলক্ষেত মোড়েও মানববন্ধন করেছেন ঢাবি অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রয়োজনে জায়গা খালি রেখে ক্লাস করানো হোক। সবকিছুই যেখানে স্বাভাবিক, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিমা সুলতানা বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট, শপিংমল, দোকানপাট, গণপরিবহন চলতে পারলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও অবশ্যই চলতে পারবে। তাদের চেয়ে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি সচেতন। সবকিছু খোলা রেখে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো মানেই হয় না। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা অতি দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ, সেশনজট না বাড়িয়ে অবিলম্বে ক্লাসে ফেরার ব্যবস্থা করুন।’

হল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দাও আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর টিউশনিও নেই। এটা খুবই কষ্টের।

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী রোকাইয়া নওশীন বলেন, ‘সরকার গার্মেন্ট মালিক, বাস মালিকসহ অন্য ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু করোনাকালে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেনি। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নোটিশ দেওয়া আর নতুন নতুন তারিখ ঘোষণা করা।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘অনেক জায়গা থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে চাপ আছে। কিন্তু ছাত্রসমাজ বা অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো চাপ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বার্তা আসে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবেন না, এমন বার্তাই বেশি আসে। নানা জায়গা থেকে শোনা যাচ্ছে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু আন্দোলনের জন্য আমরা জনগণকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেই ক্যাম্পাস খোলা হবে। কোনো অবস্থাতেই আমরা জনগণের স্বাস্থ‌্য নিয়ে অবহেলা করব না।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব‌্যাপারে শিক্ষা সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ বলেননি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি যখনই অনূকূলে আসবে, প্রথম সুযোগটুকু আমরা নেবো।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে কোন স্তরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এগুলো এখনও চূড়ান্ত হয়নি। করোনার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যখনই নিয়ন্ত্রণে আসবে, তখন সরকারের গঠিত কারিগরি কমিটিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে চূড়ান্ত করব।’

Share this post

scroll to top