বরিশালে গুলি, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা, আওয়ামী লীগের ১২ নেতাকর্মী গ্রেফতার

রিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনের সামনে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের ৩ দফা গুলি, ক্ষমতাসীন ও সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় ৩০ থেকে ৪০ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকশ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু এবং সদর উপজেলা কড়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবুসহ ১২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ১০ প্লাটুন বিজিবি চেয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। এছাড়া পাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৮জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনা হচ্ছে বরিশালে। এ ঘটনা খতিয়ে দেখে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এদিকে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর হামলার ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবী করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

সিটি করপোরেশনের ব্যানার-বিলবোর্ড অপসারণ নিয়ে গত বুধবার রাতে সদর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে ৩ দফা গুলি এবং দফায় দফায় লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইট পাটকেল ছোড়ে পুলিশের উপর। হামলা-সংঘর্ষে পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কর্মীসহ অর্ধ শতাধিক আহত হয়। আহতদের শের-ই বাংলা মেডিকেল এবং জেলা পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজনসহ মোট ১২জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, সরকারি বাসভবনে হামলার অভিযোগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে পুলিশের উপর হামলা এবং সরকারি কাঁজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছে। তবে পুলিশের দায়ের করা মামলার বাদীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। দুটি মামলায় গ্রেফতারকৃত ১২ জনসহ ৩০ থেকে ৪০ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা কয়েক শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে নগরীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দুটি মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে।

অপরদিকে গত বুধবার রাতের ঘটনা পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভাগীয় কমিশনারের সরকারি বাসভবনে জরুরী সভা করে জেলা ও বিভাগীয় কোর কমিটি। সভা শেষে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, নগরীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১০ প্লাটুন বিজিবি এবং ১০জন ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে। ৭ থেকে ৮ প্লাটুন বিজিবি এবং ৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্ধ্যার মধ্যে বরিশালে এসে পৌঁছাবে। এ ঘটনা খতিয়ে দেখে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক। স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেন জেলা প্রশাসক। আত্মরক্ষার্থে আনসার সদস্যরা গুলি করেছে। এ ঘটনায় দোষী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, বেলা ১২টায় নগরীর কালীবাড়ি রোডে সিটি মেয়রের বাস ভবনে মহানগর আওয়ামী লীগের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে যথা সময়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ সময় মেয়রের বাসার সামনে পুলিশের অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর নির্বিচারে গুলির ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এই হামলা উদ্দেশ্যেমূলক দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতারা এর তদন্ত এবং বিচার চেয়েছেন। এদিকে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কর্মসূচী প্রণয়নে বিকেলে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত।

নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। বুধবার রাতের ঘটনায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে।

Share this post

scroll to top