রাতে কী হয়েছিল বরিশালে ইউএনও’র বাংলোয়, কেন গুলিবর্ষণ?

বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লক্ষ্য করে ইউএনওর নির্দেশে আনসার সদস্যরা গুলিবর্ষণ করেন।

বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে এ ঘটনার পর থানা কাউন্সিলসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মুনিবুর রহমান মধ্যরাতে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, যে অবস্থায় আমি আছি সেখানে বক্তব্য দেয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। আমার কোভিডে আক্রান্ত বৃদ্ধ মা-বাবা সরকারি বাসভবনের ওপর থেকে দেখছিলন কী হচ্ছে বাইরে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইউএনও বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৫-২০ জনের একটি দল মোটরসাইকেল মহড়া নিয়ে আমাদের অফিস কম্পাউন্ডের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল। পরে তারা ভেতরে প্রবেশ করলে আনসার সদস্যরা আমাকে বিষয়টি জানায়। এটা সংরক্ষিত এলাকা। সঙ্গতকারণে তারা এটা বলেছে। তখন তাদের আমি চলে যেতে বলার জন্য আনসার সদস্যদের বলি। এর পরপরই জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে রাজীব নামে এক ব্যক্তি কারো পারমিশন না নিয়ে, কারো তোয়াক্কা না করে আমার বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। আমি নিচে নামার আগেই তাদের ঘরের দরজার সামনে দেখতে পাই।
তিনি পরিচয় দেয়ার পর আমি বললাম, এত রাতে কী কারণে এসেছেন এখানে। তখন তিনি জানায় যে নির্দেশনা রয়েছে, তাই তারা ব্যানার ছিঁড়ছে। তখন আমি বললাম, এটা সরকারি সংরক্ষিত এলাকা, এখানে সরকারি অফিস-আদালত রয়েছে। আমরা সরকারি অফিসাররা এখানে থাকি। আর এত রাতে এখানে এগুলো শোভন নয়। অনুগ্রহ করে আপনারা চলে যান। কালকে যেটা করার করবেন। পার্টির যা সিদ্ধান্ত সেটা পরে বাস্তবায়ন করার অনুরোধ জানালেও তিনি বের হয়ে যাচ্ছিলেন না। পরে আমি দাঁড়িয়ে থেকে তারা চলে গেলে প্রধান গেট আনসার সদস্যদের সহায়তায় আটকে দেই। এরপর আমি বাসায় গিয়ে মা-বাবার কাছে বসি।

তিনি বলেন, তখন হঠাৎ রাত সাড়ে ১০টা প্রায়। হঠাৎ ৬০-৭০ জন লোক এখানে আসে। আনসার সদস্যরা ভয়ে দৌড়ে উপরে উঠে এসে আমাকে জানায়, স্যার আপনার বাংলোর মধ্যে ৬০-৭০ জন ঢুকছে। তারা যখন আমার বাংলোর সামনে তখন আমি ঘর থেকে বের হয়েছি। তখন একজন আমাকে পরিচয় দিলেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান বাবু। তার পাশে বহু লোকজন, সেখান থেকে একজন খুব উচ্চস্বরে আমার বৃদ্ধ মা-বাবার নাম ধরে গালিগালাজ করছিল। তখন আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি, ভাই আপনার পরিচয়টা। তিনি তখন তার নাম সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বলে জানান। একইসাথে নিজেকে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দাবি করেন। এ সময় তার পাশ থেকে একজন বলছিল, তুই পরিচয় দিয়ে কী করবি? এক সময় কথা বলতে বলতে যখন আমার পেছন দিকে লোকজন আসতে শুরু করে, তখন আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাকে ঘিরে ধরা হচ্ছে। তখন আনসার সদস্যদের ইশারা দিলে তারা আমার কাছে চলে আসে। আনসাররা বাঁশি বাজালেও যখন তারা সরছিল না, তখন আনসার সদস্যরা ফোর্স লাঠিচার্জ করেছে। তখন যে যার মতো করে দৌড়ে পালিয়েছে। এ সময় আমি নিজে মাহামুদ হাসান বাবুর হাত ধরে ফেলেছিলাম। পরে তাকে আনসারের হাতে তুলে দেই। তাদের বের করে দিয়ে আমাদের গেট আটকে দিয়েছি। তারপর ২০০ না ৫০০ আমি জানি না, বহু লোক এসে আমাদের সরকারি গেটটাকে ভেঙে তচনছ করে ভেতর থেকে ঢুকে আমার ঘরের বারান্দা পর্যন্ত চলে আসে। ভাগ্যিস আমার উপজেলার অফিসাররা চলে এসে তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা আটকে উপরে নিয়ে যায়। কারণ ওরা নিচতলায় ঘরের ভেতর পর্যন্ত চলে এসেছিল। যে সিচ্যুয়েশন সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্য দিয়ে না গেলে বোঝা যাবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বলেন, আমার পক্ষ থেকে গুলি করার অর্ডার (ডেসপাসের অর্ডার) দেয়া হয়নি। তবে আমার বাসার সামনে যখন আমাকে ঘিরে ধরা হবে তখন আনসার সদস্যরা তো আমাকে সেভ করার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক।

Share this post

scroll to top