রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ এবং গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে।
শেরেবাংলা নগর থানায় মঙ্গলবার রাতে এসব মামলা করা হয়। এর মধ্যে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ দুটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।
এর মধ্যে পুলিশের করা মামলায় মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ ১৫৫ জনকে এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মামলায় অজ্ঞাতসংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মামলায় বিএনপির ২৬ নেতাকর্মীকে দুই দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
এছাড়া অপর ১৯ জন নেতা-কর্মীর রিমান্ড ও জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ আদেশ দেন।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সী জানান, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের করা মামলায় তাদের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের কথা বলা হয়েছে। এতে তাদের ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
আর পুলিশের পক্ষ থেকে করা মামলায় সরকারি কাজে বাধা ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ করা মামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নবগঠিত কমিটির সব নেতাকেই আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু রয়েছেন। বিদেশে থাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনও মামলা থেকে রেহাই পাননি।
বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ঘটনার দিন সেখানে উপস্থিত না থাকলেও মামলায় আসামি করা হয়েছে উত্তর বিএনপির সদস্য তাবিথ আউয়ালকে। এছাড়া চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারকেও আসামি করা হয়েছে মামলায়।
ঢাকা মহানগর বিএনপির নবগঠিত দুই কমিটির নেতাদের সঙ্গে কয়েক হাজার কর্মী মঙ্গলবার সকালে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে জড়ো হন। সে সময় পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় আহত হয়েছেন পুলিশের ১০ সদস্যও।
এদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মামলায় বুধবার বিএনপির ২৬ নেতা-কর্মীকে দুই দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। অপর ১৯ জনের রিমান্ড ও জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
বুধবার শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ আদেশ দেন। এর আগে বিএনপির ৪৫ নেতা-কর্মীকে আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আসামিদের রিমান্ড শুনানি করেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ। অপরদিকে আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। পরে শুনানি শেষে ২৬ জনের দুই দিন করে রিমান্ডে ও ১৯ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ঢাকা মহানগরে বিএনপির বিক্ষোভ : সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার প্রাঙ্গণে নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরে বুধবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা পৃথকভাবে থানায় থানায় এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর নেতৃত্বে সকালে মৌচাক এলাকায় মিছিলের প্রস্তুতিকালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে বিএনপি নেতারা মালিবাগ বিশ্বরোড থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ সেখানেও বাধা দেয়। পরে তারা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
দুপুরে ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও খিলগাঁও থানা সভাপতি ইউনুস মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক ফারুকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মিছিল খিলগাঁও থানার বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজধানীর শ্যামপুর থানাধীন দোলাইরপাড় এলাকায়ও। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও শ্যামপুর থানা সভাপতি আ ন ম সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ হয়।
সূত্রাপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব, আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বে পুরাতন ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়।
এছাড়া দক্ষিণের চকবাজার, কদমতলী, শাহবাগ, নিউমার্কেট, কামরাঙ্গীরচর, ডেমরা, মতিঝিল, মুগদা, কোতোয়ালি ও বংশাল থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা স্ব-স্ব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরের বেশ কয়েকটি থানায়ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দুপুরে মিরপুরে এস এ সিদ্দিক সাজুর তত্ত্বাবধায়নে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এতে উপস্থিত ছিলেন মিরপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী দেলোয়ার হোসেন দুলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান এনা, আজিজুর রহমান রতন প্রমুখ। দারুস সালামে মিছিল বের করে থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এতে উপস্থিত ছিলেন দারুস সালাম থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফ মৃধা, সহসভাপতি মোহাম্মদ কালাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ইয়াসিন, আমানউল্লাহ, লিটন খান প্রমুখ।