সাধন বালা, প্রকৃত বয়স ৬০ বছরের বেশি। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া বয়স ৫০ এর নীচে। স্বামী নন্দলাল দেবনাথ অসুস্থ, তার বয়সও প্রায় ৬৫’র কাছাকাছি। কোন সন্তান নেই তাদের সংসারে।
তাই অসুস্থ স্বামীর ওষুধ খরচ এবং নিজেদের সংসার চালানোর দায়িত্ব এ বৃদ্ধা সাধন বালার কাঁধে। প্রতিদিন পরিত্যক্ত স্থান থেকে বিভিন্ন প্রকারের বুনো শাক সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন সাধন বালা। যা দিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।
লক্ষীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের আহম্মদনগর গ্রামের পোদ্দার বাড়িতে স্বামীকে নিয়ে বসবাস সাধন বালার।
নিজস্ব কোন জমি নেই এ অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির। এক আত্মীয়ের জমিতে ঘর তুলে থাকেন, যা গেল বছর আগুনে পুঁড়ে যায়। কোন রকম ওই ঘর মেরামত করে বসবাস করেন, তাও আবার ভারী বৃষ্টি হলে সে ঘরে পানি প্রবেশ করে। ফলে ঝড় বৃষ্টি, তীব্র রোদ, শীতের সাথে যুদ্ধ করে ওই ঘরে কোন মতে দিন অতিবাহিত করছে তিনি।
মঙ্গলবার (১৭ আগষ্ট) বিকেলে তার সাথে কথা বলে এসব জানা গেছে। এ সময় তিনি লক্ষীপুর শহরের তরকারী হাটায় বুনো শাক বিক্রি করছিলেন।
সাধন বালা বলেন, বিগত ২০ বছর থেকে আমি বিভিন্নস্থান থেকে বুনো শাক সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা পাই। যার বেশিরভাগ অংশ চলে যায় স্বামীর ওষুধ খরচে। স্বামী আগে রিক্সা চালাতো। গত তিন বছর থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই রিক্সা চালনো বন্ধ দিয়েছে। সন্তানও নেই। এখন আমার উপর স্বামীর চিকিৎসা করানো এবং সংসার চালানোর দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সকালে বাড়ির আশেপাশের পরিত্যক্ত মাঠে বা ডোবায় বুনো শাক সংগ্রহের জন্য নেমে পড়ি। বিকেলের দিকে শহরে বিভিন্নস্থানে বসে সেগুলো বিক্রি করি। যে টাকা পাই, যাতায়াতে চলে যায় দৈনিক একশ’ টাকা।
তিনি বলেন, সেলাইয়ের কাজ জানা আছে, একটি সেলাই মেশিন পেলে শাক কুড়ানো বাদ দিয়ে ঘরে বসেই সেলাইয়ের কাজ করতাম। বৃদ্ধ বয়সে ডোবায় নেমে বা গ্রামে হেঁটে হেঁটে বুনো শাক খোঁজা খুব কষ্টকর। নিজেও শারীবিকভাবে একটু অসুস্থ।
বয়স্ক ভাতা পান কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রকৃতভাবে বয়স বেশি হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম। তাই বয়স্কভাতা পাই না। আমার স্বামীর বয়সও ৬০ এর উপরে। সেও বয়স্ক ভাতা পায়না। তবে মাঝে মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল পাই। যা দিয়ে কয়েকদিন চলে।
সাধন বালা জানান, তার নিজের এবং স্বামীর কোন জমি নেই। বোনের বাড়িতে একটি ঘরে থাকতেন। সে ঘরটি গেল বছর আগুনে পুঁড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়। পরে পোড়া টিন দিয়ে স্থানীয়দের সহযোগীতায় কোনভাবে পুনরায় ঘর তুলে এখন বসবাস করছেন। কিন্তু বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতর পানি ঢুকে। নিজেদের সাধ্য নেই নতুন টিন কিনে ঘরে লাগাবে। তাই ঘর মেরামতে প্রশাসন এবং ভিত্তশালীদের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
সাধন বালার বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, সাধন বালা প্রকৃত অসহায় হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতা করা হবে।