মধুমতি তার কেড়ে নিয়েছে সব। ৫ বিঘা ফসলি জমি, ভিটে মাটি, বাড়ি সবই চলে গেছে মধুমতি নদীর গর্ভে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালি গ্রামের বৃদ্ধ নফের মোল্যা (৮০) এখন ৪ ছেলে, ৪ পুত্রবধূ আর ৬ নাতি নাতনিকে নিয়ে বাস করছেন পরের জমিতে।
বৃদ্ধ নফের মোল্যা বলেন, যুবক বয়স থেকে মধুমতি নদীতে ভাঙন দেখছি। তবে ৬ বছর ধরে মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে এখন নি:স্ব। ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন পরের জমিতে বাসবাস করতে হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ না দিলে আমার মতো অবস্থা হবে নদী পারের সব বাসিন্দাদের।
নফের মোল্যার মতো একই অবস্থা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ইছাখালি, ডুবসি, চরঘোষাল, ঘাঘাধলইতলা, মধুপুর, গোবরা এবং কাশিয়ানী উপজেলার পারকরফা ও জয়বাংলা গ্রামের কয়েকশ পরিবারের।
সদর উপজেলা ইছাখালি গ্রামে গেলে জানা যায়, এ গ্রামে মধুমতি নদীতে ভাঙন চলছে প্রায় ৫০ বছর ধরে। এ গ্রামের অর্ধেক জায়গা এখন নদীর গর্ভে। মধুমতির গর্ভে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি, কয়েকশ বাড়িঘর আর বসত ভিটা। আতঙ্কে রাত কাটে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের। কয়েকশ পরিবার স্বর্বস্ব হারিয়ে বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে ও পরের জমিতে। বসত ভিটা বাঁচাতে অন্যত্র সরেছে অন্তত হাজার পরিবার।
সদর ও কাশিয়ানী দুই উপজেলায় অন্তত ১০ পয়েন্টে মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র। ভাঙনের কবলে পড়ে বসত ঘর ও মালামাল বাঁচাতে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। কিছু এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করলেও তা কোন কাজেই আসছে না।
ইছাখালি গ্রামের মো. ইউনুস মোল্যা (৮০) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মধুমতি নদীতে ভাঙন তীব্র। বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি সব নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। এখন খোলা আকাশে নিচে বাস করতে হচ্ছে।
একই গ্রামের মক্তিযোদ্ধা মো. ইসুব আলী বলেন, ফসলি জমি যা ছিল সবই এখন মধুমতি নদীর মধ্যে চলে গেছে। বিভিন্ন সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেললেও কাজে আসছে না। স্থায়ী বাঁধ না হলে এই স্থান থেকে চলে যেতে হবে আমাদের।
একই গ্রামের হেমেলা খান (৬৫) ও লাইলী বেগম (৫৫) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর জায়গার উপর বসবাস করে আসছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই নদীর মধ্যে সব চলে গেছে। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্যের জমিতে বাস করতে হচ্ছে।
মধুমতির ক্ষতিগ্রস্ত বাদশা সিকদার ও সুজন মাহমুদ বলেন, এ এলাকায় নদী ভাঙনের কোন স্থায়ী সমাধান নেওয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ইছাখালী গ্রামটিই হারিয়ে যাবে।
সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুপারুল আলম টিকে বলেন, এ এলাকার তিন দিকেই মধুমতি নদী। প্রতি বছর মধুমতির ভাঙনে ইছাখালী, ডুবসীসহ কয়েকটি গ্রামের বাড়ি ঘর, ফসলি জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে আরো পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হবে।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফায়জুর রহমান জানান, জেলার নদী ভাঙনরোধে ১১টি প্যাকেজের সমন্বয়ে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ৬টি প্যাকেজের ডিজাইন পাওয়া গেছে। চুড়ান্ত অনুমোদন পেলে দরপত্র আহবান করা হবে।
তিনি বলেন, নদী ভাঙনরোধে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়া খুব তাড়াতাড়ি ৫শ কোটি টাকার একটি ডিপিও পাওয়া যাচ্ছে। ডিপিওটি পাওয়া গেলে দ্রুত নদী ভাঙনের স্থায়ী কাজ শুরু করা হবে।