স্কোর বোর্ডে মাত্র ১৩১ রানের পুঁজি। এই সংগ্রহ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের আশা করা যায় নাকি! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ইনিংস শেষেই ম্যাচের ফল দেখে ফেলেছিলেন যারা, তাদের বোকাই বানালেন স্বাগতিক স্পিনাররা।
নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিতে নাকানিচুবানি খাওয়া অজি ব্যাটাররা একরকম আত্মসমর্পণই করল এদিন। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ পেল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে ২৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১৩২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অজিরা ঠিক ২০ ওভারে গুটিয়ে গেছে ১০৮ রানে।
নাসুম আহমেদ ৪ ওভার বল করে ১৯ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট। ম্যাচসেরাও তিনি।
এ ছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদি হাসান ও সাকিব আল হাসান।
অজিদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন মিচেল মার্শ। এই ডানহাতি ৪৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। নাসুম আহমেদের বলে ফেরার আগে বাংলাদেশের জয়ের পথে বড় বাঁধা হয়ে ছিলেন তিনিই।
এর আগে মার্শের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৩৮ রান যোগ করা ম্যাথু ওয়েডকেও ফেরান নাসুম। চাপের মুখে ওয়েড ২৩ বলে ১৩ রান করেন।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটাই ছিল দারুণ। ২.১ ওভারেই প্রতিপক্ষের তিন উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। প্রথম তিন ওভার তিন স্পিনার দিয়ে করিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তিনজনই আক্রমণে এসেই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। মেহেদি ও সাকিব তো ম্যাচে নিজেদের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন।
ইনিংসের প্রথম বলেই ওপেনার অ্যালেক্স ক্যারিকে (০) বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন স্পিনার মেহেদি হাসান। নাসুম পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন আরেক ওপেনার জশ ফিলিপিকে (৯)। তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসেই সাকিব বোল্ড করেন ময়জেস হেনরিকসকে (১)। ফলে ২.১ ওভারেই মাত্র ১১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাথু ওয়েডকে নিয়ে মার্শ সেই ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করলেও নাসুমের বলে পরাস্ত হন দুজনই। মাঝে অ্যাস্টন অ্যাগার (৭) নাসুমের বলেই হিট আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন।
শেষ ৪ ওভারে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৬ রানে সমীকরণ মেলাতে হতো অজিদের। ততক্ষণে নাসুম, সাকিব ও মেহেদির ওভার কোটা শেষ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা শঙ্কাই তৈরি হয়েছিল টাইগার ভক্তদের মনে। তবে মোস্তাফিজ ও শরিফুল শেষটা ভালোভাবেই সামলেছেন।
১৯তম ওভারে শরিফুল জোড়া উইকেট শিকার করেন। ফেরান আন্দ্রে টাই (০) ও অ্যাডাম জাম্পাকে (০)। ১৮তম ওভারে অ্যাস্টন টার্নারকে (৮) তুলে নেওয়া মোস্তাফিজ শেষ ওভারের শেষ বলে মিচেল স্টার্ককে (১৪) বোল্ড করে গুটিয়ে দেন অজিদের ইনিংস।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩১ রানের পুঁজি গড়ে।
মিচেল স্টার্ককে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে দারুণ এক ছক্কায় নিজের ও দলীয় রানের খাতা খুলেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম। কিন্তু অমন একটা শুরুর পরও বাংলাদেশের ব্যাটিংটা হতাশারই ছিল।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে নাঈমের ওই ছক্কায় শুরুটা ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে টি-টোয়েন্টির আমেজ পাওয়া গেছে কমই। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৩ রান তুলতে পেরেছিল স্বাগতিকেরা। ৩৬ বলের মধ্যে ২৩টিই ছিল ডট বল। ১০ ওভার শেষে স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৫৮।
সর্বোচ্চ ৩৬ রান এসেছে সাকিবের ব্যাট থেকে। ৩৩ বলে ৩ চারে এই রান করেন তিনি। ওপেনার নাঈম ২৯ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় করেন ৩০ রান। এ ছাড়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২০ বলে ২০, আফিফ হোসেন ধ্রুব ১৭ বলে ২৩ রান করেন।
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল জস হ্যাজলউড। মিচেল স্টার্ক নিয়েছেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা ও আন্দ্রে টাই।
একই ভেন্যুতে বুধবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দুই দল।