বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘মিডনাইট ইলেকশন’ এর সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ওবায়দুল কাদের এখন স্বেচ্ছায় বিএনপির উপদেষ্টা হতে চলেছেন। তিনি আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতিনিয়ত বিএনপিকে উপদেশ দিচ্ছেন।
সভা-সমিতি, মঞ্চ, গণমাধ্যম ও ব্রিফিংয়ে বিএনপির কি করা উচিৎ, বিএনপির পরিণতি কি হবে, বিএনপি নির্বাচন ভীতিতে ভুগছে, বিএনপি সংসদে যোগ দেবে ইত্যাদি নানা কথার খৈ ফুটাচ্ছেন প্রতিদিন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রিজভী বলেন, সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ওবায়দুল কাদের শালীনতা, ভব্যতার গুণমান বিবেচনা না করে বিএনপির বিরুদ্ধে ক্রমাগত উপদেশের ভাঙ্গা টেপ রেকর্ড বাজিয়েই চলেছেন। সুতরাং খামোখা আওয়ামী লীগে থেকে তার লাভ কী, বরং ওবায়দুল কাদেরকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
বিএনপির দরজা খোলা আছে। এমনিতেই অনাচারের পাহাড়সম স্তূপে আওয়ামী নেতাকর্মীরা ভীত সন্ত্রস্ত, কখন কী হয় আতঙ্কে তাদের সারাদিন কাটে। বিভিন্ন এলাকায় তারা তলেতলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখা শুরু করেছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আওয়ামী নেতাকর্মীরা আসলেই উদ্বিগ্ন। ক্ষমতার বৃক্ষ উপড়ে যাওয়ার পর অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গভীর দু:শ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সেজন্য স্বেচ্ছায় বিএনপির উপদেষ্টার আসনে বসতে চাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবসহ অন্য নেতারা।
সংসদে না যাওয়ায় প্রতিনিয়ত বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সমালোচনা করছেন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, তিনি আরো বলেছেন- ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগে বিজয় ছিল প্রত্যাশিত। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে এবং জনগণ বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে।’
আসলে এ দেশে বাক-স্বাধীনতা শুধু একজনেরই আছে, তিনি হলেন ‘মিডনাইট ভোট’ এর প্রধানমন্ত্রীর। তিনি সবার বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে একাই লাগামহীন কথাবার্তা বলেন। বিরোধী দলকে কারাগারে ঢুকিয়ে নির্বাচনী ময়দান শূন্য করার পর বিজয় তো প্রত্যাশিত হবেই।
রাতে ভোটারদের ঘুমানোর সময় প্রশাসন ও পুলিশ ব্যালট বাক্স পূর্ণ করলে সেই ভোট তো অবাধ ও সুষ্ঠু হয়ই, কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবাধে ব্যালট পেপারে সুষ্ঠুভাবে সীল মারতে পারে।
ভোটের দিনের ভোট ‘আউট সোর্সিং’ করে আগের দিন রাতে ব্যালট বাক্স ভরে দিয়ে তো ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ভোটের আগের দিন রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করলে ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু তো হবেই। তবে শেখ হাসিনা ও দলের নেতাকর্মী ছাড়া অন্য কেউ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলেনি। এমনকি মহাজোটের শরীকরাও এখন বলছে যে, ভোট হয়েছে আগের দিন রাতেই। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ক্ষমতাক্ষুধা গ্রাস করেছে গণতন্ত্রকে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধান বাক-স্বাধীনতাকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েছে, আর আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে নিজেদের কাণ্ডজ্ঞান রহিত বাক-স্বাধীনতা আর বিরোধীদের বোবা করে রাখা।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নেই, আছে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায়- এগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদ চোখে পড়ে না প্রধানমন্ত্রীর।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের ময়দানে রক্তক্ষয়, নজীরবিহীন গ্রেফতার অভিযান ও সংসদীয় এলাকায় রক্তস্রোত বয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীদের বেশ কিছুসংখ্যককে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বৈরতান্ত্রিক দমনের সকল শক্তি দিয়ে বিরোধী শক্তিকে অবরুদ্ধ করে এক অভিনব ‘মিডনাইট মহা ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ এর পর সেই সরকারের মন্ত্রীরা তামাশার মঞ্চে কৌতুক প্রদর্শন করা ছাড়া আর কিইবা এই মুহূর্তে করতে পারে। কারণ ভোট ডাকাতির সফলতা ছাড়া চারিদিক থেকে তারা ব্যর্থ।
রিজভী বলেন, পথের কাঁটা সরানোর জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মতো বিপুল জনপ্রিয় একজন জাতীয় নেত্রীকে এক বছর ধরে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে। দাগী খুনীদের মুক্তি দিয়ে নির্দোষ ব্যক্তি জাহালমকে তারা জেল খাটায়। বাহুবলে বিরোধী শক্তিকে তারা নির্মূল করার চেষ্টায় লিপ্ত। জাতীয় থেকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত দুর্নীতির বিস্তার, নারী-শিশু নির্যাতনের ভয়ঙ্কর প্রকোপ, সড়কে মৃত্যুর মিছিল, গুম ও খুনের ভয়াবহ আধিপত্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণসহ দেশব্যাপী গণতন্ত্র এখন হাহাকার করছে।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নীতির প্রতি যারা অবাধ্য তাদের ঠিকানা হচ্ছে কারাগার। এমতাবস্থায় ‘মিডনাইট ভোটের সরকার’ এর প্রধান শেখ হাসিনা তো বলবেনই যে নির্বাচনে তাদের বিজয় ছিল প্রত্যাশিত।
তিনি বলেন, আজ বিএনপি চেয়ারপারসন, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, গণমানুষের নেত্রী, গণতন্ত্রের প্রতীক ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিহিংসা পূরণের সাজা দেয়ার এক বছর পূর্ণ হলো। চরম অবিচার আর অন্যায়ের আঘাতে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়েছে। এটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সাজা। এক ব্যক্তির অত্যুগ্র ক্ষমতাক্ষুধা চরিতার্থ করতেই গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে কবরস্থ করার জন্য বেগম জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়েছে। একজন তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে এক বছর কারাগারে রাখার নজীর পৃথিবীর কোথাও নেই। এটি অপরিসীম জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী নেত্রীর বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী শক্তির নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলা।
বেগম জিয়ার মুক্তি আইন ও বিচারের ওপর নির্ভরশীল নয়, এটি নির্ভরশীল শেখ হাসিনার মর্জির ওপর। সুতরাং আইন আদালতকে প্রভাবিত করেই বেগম জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আমরা এই মুহূর্তে তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
রিজভী জানান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সারাদেশে বিএনপির বন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার বেলা আড়াইটায় শুধু ঢাকায় রমনাস্থ ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া শনিবার দেশব্যাপী একই দাবিতে ঢাকা মহানগরী বাদে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।