পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযোগ্য আসন শূন্য থাকছে প্রতি বছর

দেশের সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি যুদ্ধ চললেও ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষে দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিযোগ্য অনেক আসন শূন্য থাকছে। গত দুই বছর দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান (প্রথম বর্ষে) শ্রেণীতে প্রায় এক হাজার ভর্তি আসন শূন্য ছিল। আর মাস্টার্স পর্যায়ে এই ভর্তি আসন শূন্য ছিল আরো কয়েক হাজার। এর মধ্যে ২০১৭ সালে শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬১টি ভর্তিযোগ্য আসন শূন্য ছিল।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আসন শূন্য থাকাসংক্রান্ত এ তথ্য পাওয়া যায়। ইউজিসির প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে ২০১৭ সালে ৯৬৩টি আসন শূন্য ছিল। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯৩১টি। উভয় বছর দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তিযোগ্য শূন্য আসনের সংখ্যা ছিল এর দ্বিগুণেরও বেশি।

ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে দেশে ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে আসন সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ৬৯৫টি। পক্ষান্তরে ভর্তিযুদ্ধের পর শিক্ষার্থী ভর্তি হয় ৪৯ হাজার ৬৬৭ জন। ইউজিসির প্রতিবেদনে ২০১৭ সালে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে আসন শূন্য থাকার কথা বলা হয়নি।

কারণ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূন্য থাকে। দুই সমীকরণ মিলিয়ে শূন্য আসনের গ্যাপ পূরণ হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, আসন সংখ্যা ও শূন্য আসনের যে তালিকা দেয়া হয়েছে তাতে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূন্য থাকার চিত্র রয়েছে। যেমন ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে ৪৬১টি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০৪টি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬১টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০টি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৯টি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি আসন শূন্য থাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৭ সালে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে আসন সংখ্যা ৩৫ হাজার ৫টি। শিক্ষার্থী ভর্র্তি হয় ৩২ হাজার ৭২৩ জন। সব মিলিয়ে ওই বছর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূন্য থাকে ৩ হাজার ২৫১টি। ২০১৭ সালে দেশে ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান, মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডি মিলিয়ে মোট আসন ছিল ৮৮ হাজার ৯৪৭টি।

২০১৬ সালে দেশের ৩৪ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে আসন সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ৩৫৩টি। ভর্তি করা হয় ৪৬ হাজার ৮২১ জন। ফলে ওই বছর ৪৬৮ জন শিক্ষার্থী অতিরিক্ত ভর্তি হয়। কিন্তু পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি আসন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় ১ হাজার ৩৬৯ জন।

আবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে আসন শূন্য থাকে ৯৩১টি। ২০১৬ সালে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ৩ হাজার ১৬৭টি আসন শূন্য থাকে। মাস্টার্সে ভর্তিযোগ্য মোট আসন ৩২ হাজার ৩৬৮টি। ২০১৬ সালে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে সবচেয়ে বেশি আসন শূন্য থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪৩টি।

এরপর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭৪টি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯১টি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫২টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ৪০টি এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১০টি। ২০১৬ সালে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান/মাস্টার্স এমফিল, পিএইচডি সব মিলিয়ে মোট আসন ছিল ৮২ হাজার ৯৪৮টি। এর মধ্যে শূন্য আসন ছিল ৪ হাজার ৯৮টি। ২০১৫ সালে ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূন্য ছিল ১ হাজার ৬২৯টি।

বর্তমানে প্রতি বছর বিপুল শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫সহ উত্তীর্ণ হয়। তাদের প্রায় সবারই লক্ষ্য থাকে নামকরা কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। সে কারণে নামকরা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি আসনের বিপরীতে ৩০ থেকে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী অংশ নেয়ার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সঙ্কটের কারণে সবার ভাগ্যে প্রত্যাশিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয় না। যদিও বাদ পড়াদের মধ্যে অনেকেই নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্য।

ভর্তি লড়াইয়ের এ তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া অনেকের কাছে যেন সোনার হরিণ পাওয়া। অথচ দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর ধরে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে বিপুল আসন শূন্য থাকছে, যা রীতিমতো বিস্মিত করেছে ইউজিসিসহ দেশের শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকদের।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top